পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতুস্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ
১৬৩

আমাদেরও তো আর একজন চাপরাশির দরকার, এ’কে কি রাখবেন? বন্দুক চালাতে পারে, লাঠি খেলতে পারে, জমিদারের সর্দ্দার ছিল, লায়েক লোক।”

 হিরণকুমার এ কথায় কর্ণপাত করিলেন না, তিনি তখন পিস্তল দেখিতে ব্যস্ত ছিলেন। দেখিতে দেখিতে পিস্তলের এক প্রান্তে কয়েকটি অক্ষর মুদ্রিত দেখিলেন, পড়িয়া তাঁহার মুখ বিস্ময়-পূর্ণ হইল; দেখিলেন ইংরাজি অক্ষরে লেখা “যামিনীনাথ রায়।” তিনি সবিস্ময়ে বলিয়া উঠিলেন, ‘যামিনীর পিস্তল!' নবাগত উমেদার উত্তর অপেক্ষায় সেই স্থানে দাঁড়াইয়া ঐ সকল দেখিতেছিল। হিরণের মুখনির্গত বিস্ময়-প্রসূত ঐ কথাটী শুনিয়া সে আস্তে আস্তে তাঁহার একটু কাছে আসিয়া দাঁড়াইল; বিশেষ লক্ষ্যের সহিত দেখিয়া দেখিয়া বলিল, “হ্যা বাবুর পিস্তল বলেই মনে হচ্ছে, আমাকে একবার দেখতে দেবেন?”

 হিরণ বিস্মিত ভাবে উমেদারের হস্তে পিস্তলটী দিয়া বলিলেন, তুমি কি যামিনীবাবুর চাকর ছিলে?”

 সে বেসুরে উত্তর করিল, “আজ্ঞে হ্যাঁ।”

 বলিয়া পিস্তলটী লইয়া ঘুরাইয়া ফিরাইয়া বিশেষ রূপে দেখিতে লাগিল। সেই মুদ্রাঙ্কিত অক্ষরগুলি দেখিয়া তাহার মুখ চক্ষু আরক্তিম হইল, ক্রুদ্ধস্বরে বলিল, এ পিস্তল আমি চিনি, এ বাবুরই পিস্তল বটে।” হিরণ তাহার ভাবে, কথায় অবাক হইয়া বলিলেন, পিস্তল তবে চোরের হাতে গেল কি করে?”

 “চোর! না—”, বলিয়াই সে থামিল; কি একটী কথা বলিতে যেন সে ভয় পাইতেছিল। শেষে যখন তাহার কথায় অন্য সকল ভৃত্যকে প্রস্থান করিতে আদেশ করিয়া হিরণ কথা দিলেন যে বলিলে তাহার কোন হানি হইবে না, তখন সে বলিল, “মহাশয়, সে চোর না, যামিনীবাবুর দরোয়ান—”