পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চত্রিংশ পরিচ্ছেদ
১৬৯

বলিলেন “এই জিনিষটিকে ধন্যবাদ দিন, এরই অনুগ্রহে। চিনতে পারেন কি পিস্তলটি কার?”

 যামিনী চমকিয়া উঠিলেন, যে পিস্তলটি হিরণকে মারিবার জন্য পাঠানকে দেন তাহা ফিরিয়া পান নাই মনে পড়িল, বিপদ আশঙ্কা করিলেন, কিন্তু প্রত্যুপন্নমতিত্ব বলে সপ্রতিভভাবে বলিলেন “এ কথা আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন কেন? আমি কি করে জানব?”

 হি আপনি যদি না জানেন তবে আমিই বলি। এ আপনারি পিস্তল— আমি আপনার চাকরের হাতে—

 যামিনী ক্রুদ্ধ স্বরে বলিলেন “আপনি কি পাগল না মাতাল কিম্বা কি কিছুই ত বুঝতে পারছিনে! প্রমোদ যদি আপনাকে মনঃক্ষুণ্ণ করে থাকেন তার শোধ আমার উপর তোলাটা নিতান্তই অভদ্রের কাজ।

 হিরণ এই কথায় বৃশ্চিকদষ্টের ন্যায় আহত হইয়া বলিলেন “যামিনীনাথ তোমার মত নরাধম সংসারে নেই!”

 যামিনী ক্রুদ্ধ স্বরে বলিলেন “মুখ সামলে কথা কবেন, আপনার হাতে পিস্তল, এখনি পুলিষ ডাকব।”

 “যে দিন প্রমোদকে খুন করতে পাঠান, সেদিন পুলিষের ভয় হয় নি? পুলিষ ডাকলে আমার ভয় সেই, আপনারি ভয়।” হিরণকুমার পিগুলের মুদ্রাঙ্কিত নাম পড়িয়া বলিলেন “যামিনীনাথ রায়।”

 যামিনীর মস্তকে যেন বজ্র পড়িল, তিনি মুহূর্ত্তকাল বাক্শক্তিহীন হইয়া পড়িলেন। এতক্ষণ তাঁহার বিশ্বাস ছিল, তাঁহার নামাঙ্কিত পিস্তল তিনি পাঠানকে দেন নাই, সেই জন্য এতক্ষণ বেশ সজোরে কথা কহিতেছিলেন। সহসা যখন ভ্রম সংশোধিত হইল, দেখিলেন মনের বাগ্রতা বশতঃ তাড়াতাড়িতে না দেখিয়া আপন নামাঙ্কিত পিত্তলই হস্তান্তর করিয়াছেন তখন মুহূর্ত্তকাল জ্ঞানশূন্য হইয়া পড়িলেন। আত্মরক্ষার আকুলতায় হিরণকুমারের হাত হইতে পিস্তলটা কাড়িবার অভিপ্রায়ে অজ্ঞাতভাবে হস্ত বাড়াইলেন,