পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
ছিন্নমুকুল

অনিচ্ছুক হইয়া অন্য স্থানে পলায়ন করিল, প্রমোদের পলায়নে কনক হৃষ্টচিত্তে একাকী সুশীলার নিকট গেল। কনকের সন্তুষ্টির কারণ তখন প্রমোদ বুঝিতে পারেন নাই, তাহার পর বুঝিলেন যে কনক এখন একাকী গেলে, তাহার উপর দিয়াই যাহা ঝড় বহিবার বহিয়াই ক্ষান্ত হইয়া যাইবে, প্রমোদের আর কোন কষ্ট পাইতে হইবে না, এই মনে করিয়াই কনক আহ্লাদপূর্ণ হইয়াছিল। আপন পৃষ্ঠে শাস্তি লইয়া ভ্রাতাকে বাঁচাইতে পারিল, এইজন্য কনকের যে প্রচুর আহ্লাদ হইয়াছিল, তাহা প্রমোদের মনে পড়িল। এইরূপ কত শত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্নেহময় ঘটনাগুলি তখন প্রমোদের মনে পড়িতে লাগিল। তখন কনকের ভালবাসা তাঁহার নিকট অমূল্য বলিয়া বোধ হইল। আপনাব সমস্ত নিষ্ঠুর ব্যবহার মনে করিয়া প্রমোদের অনুতাপ হইতে লাগিল। ভাবিলেন এবার বাড়ী গিয়া আর কনককে কষ্ট দিবেন না। কিন্তু দিন কতক কলিকাতায় থাকিতে থাকিতে আবার যখন কলিকাতা সহিয়া গেল, তখন সঙ্গে সঙ্গে তিনি সে সকল কথাও ভুলিয়া গেলেন, কনককেও ভুলিলেন, অনুতাপেরও ক্রমে অবসান হইল। কিন্তু কনক ভাইটিকে দেখিবার জন্য কতই ব্যাকুল হইত, সারা বৎসর তাহার জন্য কতই উৎহকভাবে অপেক্ষা করিয়া থাকিত, পরে ছুটিতে প্রমোদ বাড়ী আসিলে সে আনন্দে উৎফুল্ল হইয়া উঠিত। যে ক’দিন প্রমোদ বাড়ী থাকিতেন কি মুখে যে দিনগুলি তাহার কাটিত তাহা বলিবার নহে। এবারও সারাবৎসর অপেক্ষা করিয়া করিয়া আশ্বিন মাস আসিল, কত ব্যগ্রভাবে কনক প্রমোদের জন্য অপেক্ষা করিতেছিল তাহা বলা যায় না। কিন্তু অবশেষে এক দিন হতাশ হইয়া তাহার শুনিতে হইল যে, প্রমোদ আপাততঃ কানপুরে বেড়াইতে যাইতেছেন, সেখান হইতে কিছুদিন পরে আসিবেন। কনক রালিকার বড়ই কষ্ট হইল, কিন্তু কি