পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছিন্নমুকুল
৪০

বলবান ব্যক্তির হস্তপেষিত হইয়া ক্রমে সে শক্তির অবসান হইল। নীরজাকে লইয়া একজন দস্যু পলাইল, আর তিন জন সেই বলপ্রকাশকারী কাঠুরিয়া স্ত্রীলোককে রজ্জুদ্বারা বৃক্ষে বন্ধনপূর্ব্বক দ্রুতগতিতে জঙ্গল ছাড়াইয়া তাহাদের সহিত মিলিয়া নদীতীরে উপস্থিত হইল। নদীতীরে একখানি নৌকায় উঠিয়া নৌকা ছাড়িয়া দিল; নৌকা চলিতে আরম্ভ করিলে তাহারা বালিকার মুখের বন্ধন মোচন করিয়া দেখিল—বালিকা অজ্ঞান হইয়া পড়িয়াছে। মুখে জলসিঞ্চন করিতে করিতে কিছুক্ষণ পরে নীরজার জ্ঞানোদয় হইল; নীরজা চারিদিকে চাহিয়া দেখিল—ব্যাকুল ভাবে চাহিয়া দেখিল—কোথায় সে পরিচিত বনভূমি—কোথায় বা সে মন্দির! দেখিল— তাহার পরিবর্ত্তে চারিদিকে ভীমদর্শন অপরিচিত মুর্ত্তিসমূহ তাহাদের তীব্র কঠোর দৃষ্টি মেলিয়া তাহাকে যেন গ্রাস করিতে উদ্যত! পূর্ব্বঘটনা নিমেষে স্মরণ হইল, বালিকা ঠাকুরজি—ঠাকুরজি করিয়া চাৎকার করিয়া উঠিল, অমনি একজন বলবান লোক হস্ত দ্বারা তাহার মুখ চাপিয়া ধরিয়া বলিল, “চীৎকারে কোন ফল নাই, চীৎকার করলেই মুখ বেঁধে ফেলব, কিন্তু ভালয় ভালয় চললে কিছু বলব না।” আর একজন বলিল— “আমরা কি তোমাকে খেয়ে ফেলব না কি? ভাল মানুষের মত চল—আমরাও ভাল মানুষ—নইলে আমরা সায়েস্তা করতে জানি।” বালিকার হৃদ্‌স্পন্দন যেন নিরুদ্ধ হইয়া আসিল, আতঙ্কে সে চক্ষু মুদ্রিত করিল। তাহাকে নীরব নিস্তব্ধ দেখিয়া দস্যু তাহার মুখ হইতে হস্ত সরাইয়া লইল। যখন পুনরায় বালিকা চক্ষু খুলিল তখন নিকটে কাহাকেও দেখিল না। বালিকাকে নিদ্রিত ভাবিয়া একজনকে মাত্র লোককে প্রহরীরূপে নৌকার প্রকোষ্ঠ-দ্বারে রাখিয়া অন্য সকলে দাঁড় টানিতে বসিয়াছিল। উক্ত প্রহরী খানিকক্ষণ বসিয়া বসিয়া সেইখানেই শুইয়া পড়িয়াছিল। নীরজা তাহাকে নিদ্রামগ্ন ভাবিয়া আস্তে আস্তে উঠিয়া বসিল, নৌকার গবাক্ষে