পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ
৬৯

ঘটনা তাঁহার মনে পড়িয়া গেল—তিনি বিচারককে চিনিতে পারিলেন, চিনিলেন—ছেলেবেলায় যে হিরণকুমার তাঁহাকে কঁদাইয়াছিল—এ সেই হিরণকুমার। প্রমোদ জীবনে আর কখনও ততদূর অপমানিত বোধ করেন নাই; সেই জন্য ছেলেবেলার সেই ঘটনাটী তাঁহার শিরায় শিরায় বিঁধিয়া ছিল। তবে সেই কথা মনে রাখিয়া যে প্রমোদ হিরণের প্রতি চিরশত্রুতা পণ করিয়াছিলেন তাহা নহে, তিনি বাস্তবিক সেরূপ নীচ প্রকৃতির লোক নহেন, কিন্তু প্রমোদ সেই পর্য্যন্ত হিরণকে আর কেমন দেখিতে পারিতেন না। এক একজনকে দেখিবামাত্রেই কেমন অকারণে বিদ্বেষ জন্মে প্রমোদেরও হিবণের সম্পর্কে সেইরূপ হইয়াছিল। বিচারপতিকে চিনিতে পারিয়াই প্রমোদ যেন কিছু দমিয়া গেলেন, তাঁহার আর তেমন স্ফূর্ত্তির ভাব রহিল না। কে জানে কেন তাঁহার মনে হইল তিনি নিশ্চয় মকদ্দমায় হারিবেন, তাঁহার কোন দোষ প্রমাণ না হইলেও হিরণকুমার তাঁহাকে শাস্তি দিবেন।

 বাস্তবিক, বিচারে যামিনীর সহিত প্রমোদেরও দোষ সপ্রমাণ হইল। হিরণকুমার যামিনীর একশত এবং প্রমোদের ৫০ টাকা জরিমানার আদেশ করিলেন। প্রমোদ অবশ্য মনেই করেন নাই যে তাঁহার দোষ সাব্যস্ত হইবে। আর নিতান্তই যদি হয়, তাহা হইলেও যে এই সামান্য দোষে ১০।২০ টাকার অধিক অর্থদণ্ড হইবে তাহা তাঁহার স্বপ্নেরও অগোচর ছিল, সুতরাং তিনি ২০ টাকার একখানি নোট ছাড়া আর কিছুই সঙ্গে আনেন নাই। উকীল খরচে তাহার অধিকাংশই ব্যয় হইয়া গিয়াছিল। এখন একেবারে ৫০ টাকা জরিমানা দিতে হইবে শুনিয়া তিনি যেমন বিপদে পড়লেন তেমনি ক্রুদ্ধও হইলেন। তিনি ভাবলেন হিরণকুমার তাঁহাকে চিনিয়াই এইরূপ অবিচার করিলেন। কিন্তু বাস্তবিক হিরণ তাঁহাকে চিনিতেও পারেন নাই। যখন হিরণ তাঁহাকে দেখিয়াছিলেন তখন প্রমোদ দশমবর্ষীয় বালক মাত্র, এখন যৌবনাবস্থায়