পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একটা গন্ধ, বিশেষ কোনো ফুলের গন্ধ নয়। কিন্তু। শিশরসিক্ত ঘাস, সকালের বাতাস, অড়হরের ক্ষেত, এখানে ওখানে বনজ গাছপালা, সবসুদ্ধ মিলাইয়া একটা সুন্দর সুগন্ধ । অনেক দিন পরে এই সব গাছপালার প্রথম দৰ্শনে অপুর প্রাণে একটা উল্লাসের ঢেউ উঠিল। অপূর্ব, অদ্ভুত, সুতীব্র ; মিনমিনে ধরণের নয়, পানসে পানসে জোলো ধরণের নয়। অপুর মন সে শ্রেণীরই নয় আদৌ, তাহ। সেই শ্রেণীর যাহা জীবনের সকল আবেদনকে, ঐশ্বৰ্যকে প্ৰাণপণে নংড়াইয়া চুষিয়া আঁটিসার করিয়া খাইবার ক্ষমতা রাখে। অল্পেই নাচিয় ওঠে, অল্পে দমিয়াও যায় —যদিও পুনরায় নাচিয়া উঠিতে বেশী বিলম্ব করে না । মনসাপোতা গ্রামে যখন গাড়ি ঢুকিল তখন বেলা দুপুত্ব । সৰ্বজয়া ছাইয়ের পিছন দিকের ফাঁক দিয়া চাহিয়া দেখিতেছে তাহার নূতনতম জীবনযাত্ৰা আরম্ভ করিবার স্থানটা কি রকম । তাহার শনে হইল গ্রামটাতে লোকের বাস একটু বেশী, একটু যেন ঠেসাঠেসি, ফাক জায়গা বেশী নাই, গ্রামের মধ্যে বেশী বনজঙ্গলের বালাইও নাই। একটা কাহাদের বাড়, বাহির-বাটার দাওয়ায় জনকয়েক লোক গল্প করিতেছিল, গোরুর গাড়িতে কাহারা আসিতেছে দেখিয়া চাহিয়া চাহিয়া দেখিতে লাগিল । উঠানে বঁাশের আলনায় মাছ ধরিবার জাল শুকাইতে দিয়াছে । বোধ হয় গ্রামের জেলেপাড়া । আরও খানিক গিয়া গাড়ি দাড়াইল । ছোট উঠানের সামনে একখানি মাঝারি গোছের চালা ঘর, দু’খানা ছোট্ট দোচালা ঘর, উঠানে একটা পেয়ারা গাছ ও একপাশে একটা পাতকুয়া। বাড়ির পিছনে একটা তেঁতুল গাছ--তাহার ডালপালা বড় চালাঘরখানার উপর ঝুকিয়া পড়িয়াছে। সামনের উঠানটা বঁাশের জাফরি দিয়া ঘেরা। চক্রবর্তী মহাশয় গাড়ি হইতে নামিলেন। অপু মা’কে হাত ধরিয়া নামাইল । চক্রবতী মহাশয় আসিবার সময় যে তেলিবাড়ির উল্লেখ করিয়াছিলেন, বৈকালের দিকে তাহদের বাড়ির সকলে দেখিতে ܵ