পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০
জননী

 শীতল চিনিতে পারে নাই। শ্যামা প্রণাম করিয়া বলিল, ও মাগাে, কোথায় যাবাে, এ যে মামা! কোথা থেকে এলে মামা তুমি?

 মামা হাসিয়া বলিল, একযাগা থেকে কি আর এসেছি মা যে নাম করব, চরকি বাজির মত ঘুরতে ঘুরতে একবার তোকে দেখতে এলাম, আপনার জন কেউ তো আর নেই, বুড়াে হয়েছি, কোন দিন চোখ বুজি তার আগে ভাগ্নিটাকে একবার দেখে যাই, এইসব ভাবলাম আব কি,—এরা তাের ছেলেমেয়ে না? ক'টি রে?

 শ্যামাকে মামা বড় ভালবাসিত। সে তাে জানিত মামা কবে কোন বিদেশে দেহ রাখিয়াছে, এতকাল পরে মামাকে পাইয়া শ্যামার আনন্দের সীমা রহিল না। কি দিয়া সে যে মামার অভ্যর্থনা করিবে! বাইশ বছর পরে যে আত্মীয় ফিরিয়া আসে তাকে কি বলিতে হয়, কি করিতে হয় তার জন্য? মামাকে সে নানারকম খাবার করিয়া দিল, বাজার হইতে ভাল মাছ তরকারি আনিয়া রান্না কবিল, বেশি দুধ আনাইয়া তৈরি করিল পায়স। মামা বড় ভালবাসিত পায়স। এখনাে তেমনি ভালবাসে কিনা কে জানে?

 মামার সঙ্গে একটু ভদ্রতা করিয়া শীতল কোথায় পলাইযাছিল, মামা ইতিমধ্যে শ্যামার ছেলেদের সঙ্গে ভাব জমাইয়া ফেলিয়াছে—ভারি মজার লােক। এমন আর শ্যামার ছেলে দেখে নাই। রাঁধিতে রাঁধিতে শ্যামা হাসিমুখে কাছে আসিয়া দাঁড়ায়। বলে, আর তোমাকে পালিয়ে যেতে দেব না মামা, এবার থেকে আমার কাছে থাকবে। তােমার জিনিস পত্তর কই?

 মামা বলে, সে এক হােটেলে রেখে এসেছি। কে জানত বাবু, তােরা আছিস এখানে?

 শ্যামা বলে, ওবেলা গিয়ে তবে জিনিস পত্তর সব নিয়ে এসাে—কলকাতা এসেছ কবে?

 মামা বলে, এই তাে এলম কাল না পরশু, পরশু বিকেলে।

 বিধান আজ স্কুলে গেল না। মামা আসিয়াছে বলিয়া শুধু নয়, বাড়িতে আজ নানারকম রান্না হইতেছে। মামা কি একাই সব খাইবে? এগারােটা পর্যন্ত কোথায় আড্ডা দিয়া আসিয়া তাড়াহুড়া করিয়া স্নানাহার সারিয়া শীতল প্রেসে চলিয়া গেল, মামার সঙ্গে একদণ্ড বসিয়া কথা বলারও