১৩৫
অন্নপ্রাশন
এ বাড়ি আসিয়াছে তো,—না, খালি বাড়িতে একা পড়িয়া পড়িয়া কাঁদিতেছে?
না, দেখিয়া আশ্বস্ত হইল স্ত্রী আসিয়াছে ও ইঁদারার পাড়ে একরাশ পুরোনো বাসন ঝিয়েদের সঙ্গে বসিয়া মাজিতেছে, তাহাদের আজ মরণাশৌচ, বাহিরের কাজকর্ম ছাড়া অন্য কাজ করিবার যো নাই।
মেজবাবুর যে-খোকার অন্নপ্রাশন, দালানে খাটের উপর সুন্দর বিছানাতে চারিদিকে উঁচু তাকিয়া ঠেস্ দিয়া তাহাকে বসাইয়া রাখা হইয়াছে। ন’ মাসের হৃষ্টপুষ্ট নধরকান্তি শিশু, গায়ে একগা গহনা, সামনের গদীতে একখানা থালে যে সব বিভিন্ন অলঙ্কার আত্মীয়-কুটুম্ব, বন্ধু-বান্ধবে দিয়াছে, সেগুলি সাজান। তিন-চার ছড়া হার, সোনার ঝিনুক, পদক, তাগা, বালা, রূপার কাজল-লতা। চারিধারে ঘিরিয়া মেয়েরা দাঁড়াইয়া আছে, ইহারা কেউ কেউ এ গ্রামের বৌ-ঝি, কিন্তু বেশির ভাগই নবাগতা কুটুম্বিনীর দল। সকাল হইতে বেলা এগারটা পর্যন্ত আপ-ডাউন যে তিনখানা ট্রেণ যায়, প্রত্যেক ট্রেণের সময়ে দু’ তিনখানা ট্যাক্সি বোঝাই হইয়া ইহারা কোন দল কলিকাতা হইতে, কোন দল বা রাণাঘাট, কি গোয়াড়ী কৃষ্ণনগর, কি শান্তিপুর হইতে আসিয়াছে। শহরের মেয়ে, কি সব গহনা ও শাড়ির বাহার, কি রূপ, কি মুখশ্রী, যেন এক একজন এক একখানি ছবি!
খোকাটি কেমন চমৎকার হাসিতেছে। কেমন সুন্দর মানাইয়াছে ওই বেগুনী রংয়ের জামাটাতে। তাহার খোকারও অন্নপ্রাশন দিবার কথা ছিল ন’ মাসে।
গরীবের সংসার, খোকার যখন চার মাস বয়স, তখন