পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৭
ডাকগাড়ি 

পশ্চিম পাড়ের বেলতলায় নাপিতদের ঘাট, পূবদিকে বামুন পাড়ার ঘাট, উত্তর পাড়ে যাদের জমিতে ডোবাটা তাঁদের ঘাট। তাঁরাও ব্রাহ্মণ, নিজেদের জন্যে একটা ঘাট আলাদা রাখিয়াছেন, কাহাকেও সে ঘাটে যাইতে দেন না।

 সেই বাড়িরই সুবি, ভালো নাম সুবিনীতা—তাদের ঘাটে চায়ের পাত্র ধুইতে নামিল। গ্রামের মধ্যে ওরা ওরই মধ্যে একটু শৌখীন, চা খাওয়ার অভ্যাস রাখে, সুবি কিছুদিন কলিকাতায় কাকার বাসায় থাকিয়া পড়িত। ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়িয়া পড়া ছাড়িয়া দিয়া আজ বছরখানেক বাড়িতে বসিয়া আছে। গ্রামের মেয়েদের মধ্যে তার প্রভাব ও প্রতিপত্তি খুবই বেশি, কারণ গ্রামের মধ্যে সে-ই একমাত্র মেয়ে, যে স্কুলের মুখ দেখিয়াছে—তাও আবার কলিকাতায়। সুবি দেখিতে মোটামুটি ভালোই, রং উজ্জ্বল শ্যাম, বড় বড় চোখ, একরাশ কোঁকড়া কোঁকড়া চুল, সর্বদা ফিটফাট হইয়া থাকে, একটু চালবাজ। ষোল বছর বয়েস, বিবাহের চেষ্টা চলিতেছে। রাধা সুবি বলিতে অজ্ঞান, কিন্তু সুবি তাকে বড় একটা আমল দেয় না। গরীব ঘরের মেয়ে, বাইশ তেইশ বছর বয়েস, তার ওপরে বিধবা এবং লেখাপড়াও তেমন কিছু জানে না—এ অবস্থায় রাধা কি করিয়া আশা করিতে পারে যে, সে কলিকাতার স্কুলের ক্লাস এইটু পর্যন্ত পড়া মেয়ে সুবির অন্তরঙ্গ মণ্ডলীতে স্থান পাইবে। সে পারে না—বা সে আশা করা তার উচিতও নয়।

 সুবিকে জলে নামিতে দেখিয়া রাধার মুখ ঠিক আগ্রহে ও আশায় উজ্জ্বল দেখাইল।

 সে বলিল—ও সুবি ভাই, তোদের চা খাওয়া হয়ে গেল?

 সুবি কচুর ঝাড়ের গোড়া হইতে চায়ের পেয়ালা লইয়া জল