জন্ম ও মৃত্যু
৫৬
খুড়ীমা প্রায়ই বলিতেন—পাবু, সেই গানটা গাও ত?
গ্রামের লোকে অনেকে কিন্তু খুড়ীমাকে দেখিতে পারিত না।
আমার কানেও এ-রকম কথা গিয়াছে।
একবার রায় বাড়ির বড়গিন্নীকে বলিতে শুনিলাম—কি জানি বাপু জানি নে, ও সব কলকেতার কাণ্ড। সোয়ামী যার পাগলাগারদে, তার অত চুলবাঁধার ঘটাই বা কিসের, অত পাতাকাটার বাহারই বা কিসের, এত হাসিখুশিই বা আসে কোথা থেকে! কিবে ঢং, কিবে শাড়ির রং—না বাপু, আমার ত ভালো লাগে না—তবে আমরা সেকেলে বুড়োহাবড়া, কলকেতার ফেশিয়ান্ ত জানি নি?
এ-রকম কথা আমি আরও শুনিয়াছি অন্য-অন্য লোকের মুখে।
মনে হইত তাদের নাকে ঘুষি লাগাইয়া দিই, তাদের সঙ্গে ঝগড়া করি, তাদের বলি—না, তোমরা জান না। তোমাদের মিথ্যা কথা। তোমাদের অনেকের চেয়ে খুড়ীমা ভালো—খুব ভালো।
কিন্তু যাহারা বলে তাহারা গ্রামসম্পর্কে গুরুজন, বয়স অনেক বেশি। কাজেই চুপ করিয়া থাকিতাম।
তাঁহার চেহারা, মুখশ্রী এতকাল পরে আমার খুব যে স্পষ্ট মনে আছে তা নয়। কেবল একদিনের তাঁর অপূর্ব কৌতুকোজ্জ্বল হাসিমুখ গভীর ভাবে আমার মনে ছাপ দিয়াছিল। যখন সে-মুখ মনে পড়ে তখন একটি ঊনিশ-কুড়ি বছরের কৌতুকপ্রিয়া, হাস্যমুখী সুন্দরী তরুণীকে চোখের সামনে স্পষ্ট দেখিতে পাই।