উপর। সে দেখিতে ফর্সা বটে, বেশ শহুরে-ধরনের গোছালো। কথাবার্তাও কয় বটে, শৌখীন সাজপোশাকও করে বটে, কিন্তু হয়ত তাহার ফিট্ফাটের সাজগোজের দরুনই হোক, কিংবা তাহার শহর-অঞ্চলের বুলির জন্যেই হোক, কিংবা তাহার ঘন ঘন বার্ডসাই খাওয়ার দরুনই হোক, লোকটাকে প্রথম দিন হইতেই আমি কেমন পছন্দ করি নাই। কেমন যেন মনে হইয়াছিল এ লোক ভালো না।
একদিন চৌধুরীদের পুকুরঘাটে বাঁধানো-রাণায় সর্ব চৌধুরী ও কালীময় বাঁড়ুয্যে কি কথা বলিতেছিল—আমি পুঁটিমাছমারা ছিপ-হাতে মাছ ধরিতে গিয়াছি—আমাকে দেখিয়া উহারা কথা বন্ধ করিল। আমি বাঁধানো ঘাটে নামিয়া মাছ ধরিতে বসিলাম। সর্ব চৌধুরী বলিল—তাই ত ছোঁড়াটা যে আবার এখানে।
কালীময়-জ্যাঠা বলিলেন— বল, বল, ও ছেলেমানুষ, কিছু বোঝে না।
সর্ব চৌধুরী বলিল—এখন কি করবে, এর একটা বিহিত করতে হয়। গাঁয়ের মধ্যে আমরা এমন হ’তে দিতে পারি নে। একটা মিটিং ডাকো। পরেশের বৌ সম্বন্ধে এমন হয়ে উঠেছে যে কান পাতা যায় না। নরেশকে একখানা চিঠি লিখতে হয় তার চাকুরির স্থানে, আর ওই শান্তিরাম না কি ওর নাম—ওকেও শাসন ক’রে দিতে হয়।
কালীময়-জ্যাঠা বলিলেন—শাসন-টাসন আর কি—ওকে এ-গ্রাম থেকে চলে যেতে বলো। না যায় আচ্ছা ক’রে উত্তমমধ্যম দাও। নরেশ কি চাকুরি ছেড়ে আসবে এখন কুটুম্বু শাসন করতে? সে যখন বাড়ি নেই তখন আমরাই অভিভাবক।