জন্ম ও মৃত্যু
৮৮
আমরা তো হার মেনে গেলাম। ও চুলে চিরুণী ছোঁয়াতে দেবে না, উঠবেও না, বিছানায় পড়েই রয়েচে।
কুমী ঘর থেকে বললে পড়ে থাকব না তো কি? বারে বারে সং সাজতে পারবো না আমি, কারো খাতিরেই না। হীরুদাকে বল না—সং সেজে বেরুক্ ওদের সামনে।
হীরু ঘরের মধ্যে ঢুকে কড়া সুরে বললে—কুমী ওঠ্, কথা শোন্—যা চুল বাঁধগে যা—
—আমি যাব না—
—যাবি নে, চুলের মুঠি ধরে টেনে নিয়ে যাব—ওঠ্—দিন দিন ইয়ে হচ্চেন—না? ওঠ্ বলচি—
কুমী দ্বিরুক্তি না ক’রে বিছানা ছেড়ে দালানে চুল বাঁধতে বসে গেল, সাজানো গোজানোও বাদ গেল না, মেয়ে দেখানোও হ’ল, কিন্তু ফল সমানই দাঁড়ালো অর্থাৎ পাত্রপক্ষ বাড়ি গিয়ে চিঠি দেবো ব’লে গেলেন।
জামালপুরের কাজে এসে যোগ দিলে হীরু। কিন্তু সে যেন সর্বদাই অন্যমনস্ক। কুমীর জন্য এত চেষ্টা ক’রেও কিছু দাঁড়ালো না শেষ পর্যন্ত! কি করা যায়? এদিকে কুমীদের বাড়িতেও তার পসার নষ্ট হয়েছে, তার আনা সম্বন্ধের ওপর সবাই আস্থা হারিয়েচে। হারাবারই কথা। এবার সেখানেও কথা তুলবার মুখ নেই তার। অত বড় বড় সম্বন্ধ নিয়ে যাওয়াই বোধ হয় ভুল হয়েছে। কুমীর ভালো ঘর জুটিয়ে দেবার ব্যাকুল আগ্রহে সে ভুলে গিয়েছিল যে, বড়তে ছোটতে কখনো খাপ খায় না।
লজ্জায় সে পিসিমার বাড়ি যাওয়া ছেড়ে দিলে।
বছর দুই তিন কেটে গেল।