পাতা:জাতক (প্রথম খণ্ড) - ঈশানচন্দ্র ঘোষ.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Old উপক্ৰমণিকা । কিন্তু রাজপদ নিতান্ত নিরাপদ ছিল না। রাজা অত্যাচারী হইলে প্ৰজারা বিদ্রোহী হইত এবং সময়ে সময়ে তাহাকে সিংহাসনচ্যুত বা নিহত করিয়া অন্য কাহাকেও রাজত্ব দিত ; কখনও কখনও রাজার পুত্রেরা পৰ্যন্ত পিতার বিরুদ্ধে অভু্যুত্থান করিতেন। এই নিমিত্ত রাজাকে সর্বদা অতি সাবধানভাবে চলিতে হইত। তখন কন্যাগণ যৌবনোদয়ের পর পাত্ৰস্থা হইতেন ; ক্ষত্রিয়েরা পিতৃঘস্থমুতা প্রভৃতি নিকট আত্মীয়াদিগকে বিবাহ করিতে পারিতেন। তখন । রমণীদিগের মধ্যে অনেকে সুশিক্ষা লাভ করিতেন ; সন্ত্রান্ত বংশেও বিধবার পুনর্বিবাহ হইত এবং পতি প্ৰব্ৰজ্য গ্ৰহণ করিলে পত্নীর পক্ষে পত্যন্তরগ্রহণ বিধিসঙ্গত ছিল। বৰ্ত্তমান সময়ের ন্যায় তখনও লোকে দুঃস্বপ্ন ও দুনিমিত্ত দেখিয়া ভয়ে কাপিত এবং ভূতাবলি, পিশাচবলি প্রভৃতি দিয়া শান্তি-স্বস্ত্যয়ন করিত ; তখন লোকে অর্থদ্বারা অপরের পুণ্যাংশ ক্রয় করিত। যাহারা প্ৰব্ৰাজক হইতেন। তঁহার কামিনী ও কাঞ্চনকে ভয় করিতেন। এই জন্য কোন কোন জাতকে নারীচরিত্রের প্রতি ঘোর অবিশ্বাস করা হইয়াছে— উদ্দেশ্য, যাহাতে ভিক্ষুদিগের মনে নারীসম্বন্ধে বিতৃষ্ণার উদ্রেক হয়। কিন্তু উৎপলবৰ্ণ, বিশাখা, আমপালী প্ৰভৃতির ইতিবৃত্তে দেখা যায় তখন নারীরাও ধৰ্ম্মচৰ্য্যায় পুরুষদিগের তুল্যকক্ষ ছিলেন। চতুর্থতা—জাতকের প্রত্যুৎপন্নবস্তুতে প্ৰাচীন ভারতবর্ষের, বিশেষতঃ কোশল, ভ্ৰাতৃক প্রাচীন বৈশালী ও মগধরাজ্যের, অনেক ইতিবৃত্ত আছে। কেহ কেহ বলেন প্রত্যুৎপন্ন * অংশ যখন অপেক্ষাকৃত পরবত্তী সময়ে রচিত, তখন তদন্তৰ্গত। ঐতিহাসিক বিবরণ Ծišt: , সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাসযোগ্য নহে। কিন্তু পরবত্তীকালে রচিত হইলেও ইহা নিতান্ত অপ্ৰাচীন নয়,- কারণ ইহা বৰ্ত্তমান সময়ের প্রায় সাৰ্দ্ধসহস্ৰবর্ষ পূর্বে লিপিবদ্ধ হইয়াছিল। সাৰ্দ্ধসহস্ৰবৎসর পূর্বে পুরাতত্ত্ব সম্বন্ধে যাহা লিপিবদ্ধ হইয়াছিল, প্ৰামাণিক ইতিবৃত্তের বিরোধী না হইলে তাহা আমরা অবিশ্বাস করিব কেন ? আমরা দেখিতে পাই প্ৰসেনজিতের পিতা মহাকোশল বিম্বিসারকে কন্যা দান করিয়াছিলেন এবং স্নানাগারের ব্যয়নির্বাহাৰ্থ কাশীগ্রাম যৌতুক দিয়াছিলেন। দেবদত্তের কুপরামর্শে বিম্বিসারের পুত্র অজাতশত্রু পিতৃবধ করিলে প্ৰসেনজিৎ ক্রুদ্ধ হইয়া ঐ গ্রাম বিনষ্ট করিয়াছিলেন ; তন্নিবন্ধন অজাতশত্রুর সহিত র্তাহার যুদ্ধ ঘটিয়াছিল; ঐ যুদ্ধে প্ৰসেনজিৎ প্ৰথমে পরাস্ত হইলেও পরে জয়লাভ করিয়াছিলেন এবং অজাতশক্ৰকে কন্যাদান করিয়া তাহার সহিত সন্ধিসূত্ৰে বদ্ধ হইয়াছিলেন। অতঃপর প্ৰসেনজিৎও নিজের পুত্র বিরূঢককর্তৃক সিংহাসনচ্যুত হইয়া পলায়ন করিয়াছিলেন এবং নির্বাসিত অবস্থায় মৃত্যুমুখে পতিত হইয়াছিলেন ; এই বিরূঢকই কিয়ৎকাল পরে কপিলবস্তু বিধ্বস্ত করিয়া শাক্যকুল নিৰ্ম্মল করিয়াছিলেন। অজাতশত্রু পরিণামে অনুতপ্ত হইয়া বুদ্ধের শরণ লইয়াছিলেন। তখন আৰ্য্যাবৰ্ত্তে চম্পা, রাজগৃহ, শ্রাবস্তী, সাকেত, কৌশাম্বী ও বারাণসী এই ছয়ট নগর সর্বপ্ৰধান বলিয়া গণ্য ছিল ; ইহাদের মধ্যে বারাণসীই সর্বাপেক্ষা অধিক প্ৰসিদ্ধি লাভ করিয়াছিল। বৰ্ত্তমান সময়ের ন্যায় তখনও বারাণসীর কৌশেয়বস্ত্ৰ সৰ্ব্বত্র সমাদৃত হইত। বৈশালী সমৃদ্ধিশালী হইলেও উক্ত নগরগুলির তুল্যকক্ষ হইতে পারে নাই। বৈশালীতে কুলতন্ত্র-শাসন প্রবর্ভূিক্ত ছিল; তত্ৰত্য লিচ্ছবিগণ সম্প্রীতভাৰে শাসনকাৰ্য্য নিৰ্বাহ করিতেন এবং সকলেই রাজা নামে অভিহিত হইতেন । , এইরূপ