বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ - প্রফুল্লকুমার সরকার (১৯৪৭).pdf/১২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট
১১৫

 স্বদেশী যুগে সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিল ক্ষীরোদ প্রসাদ বিদ্যাবিনোদের ‘প্রতাপাদিত্য’ নাটক। ইহাকে যুগপ্রবর্তক নাটক বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। ক্ষীরোদপ্রসাদ যদি একখানি মাত্র নাটক লিখিতেন, তাহা হইলেও তিনি অমর হইয়া থাকিতেন। এই নাটক স্বদেশী যুগে রঙ্গমঞ্চে শত শত রজনীতে অভিনীত হইয়া দেশবাসীর মনে প্রবল উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করিয়াছিল। সেকালে এই নাটক দেখিবার জন্য এত ভীড় হইত যে প্রতিদিনই স্থানাভাবে বহু দর্শককে হতাশ হইয়া ফিরিতে হইত। এখনও এই নাটক সগৌরবে বাংলা রঙ্গমঞ্চে অভিনীত হইয়া থাকে, ইহা কখনও ‘পুরাতন’ হইবে না। ক্ষীরোদপ্রসাদের ‘পলাশীর প্রায়শ্চিত্ত’, ‘রঞ্জাবতী’ প্রভৃতি নাটকও স্বদেশপ্রেমের উদ্বোধনে যথেষ্ট সহায়তা করিয়াছিল।

 দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বাঙ্গলার নাট্যসাহিত্যে নূতন ভাব ও রচনাভঙ্গী প্রবর্তন করেন। কবিতা ও হাসির গান রচনায় তিনি পূর্বেই খ্যাতিলাভ করিয়াছিলেন। স্বদেশী যুগে নাটকরচনাতেও তিনি অক্ষয় কীর্তি অর্জন করিলেন। তীব্র স্বদেশানুরাগ তাঁহার প্রকৃতিগত ছিল। তাঁহার হাসির গানগুলির মধ্য দিয়াও এই স্বদেশপ্রেম অন্তঃসলিলা ফল্গুর মত প্রবাহিত। স্বদেশী আন্দোলনে তাঁহার সেই স্বদেশপ্রেম জ্বালাময় গৈরিক স্রাবের মত নাটক ও জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়া নির্গত হইতে লাগিল। ‘রাণা প্রতাপ’, ‘দুর্গাদাস’, ‘চন্দ্রগুপ্ত’, ‘মেবার পতন’, ‘সিংহল বিজয়’ প্রভৃতি নাটকের মধ্য দিয়া স্বদেশপ্রেম ও জাতীয়ভাবকে প্রবুদ্ধ করাই দ্বিজেন্দ্রলালের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। সে উদ্দেশ্য যে বহুল পরিমাণে সিদ্ধ হইয়াছিল, তাহা কে অস্বীকার করিবে? দ্বিজেন্দ্রলালের সতেজ ওজস্বিনী ভাষা, বলিষ্ঠ রচনাভঙ্গী, বাংলা ভাষাকে নূতন শক্তি দান করিয়াছিল, নাট্যসাহিত্যে নূতন অধ্যায়ের সূচনা করিয়াছিল।