স্বদেশী যুগের ঊষা
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের আদেশের পর স্বদেশী আন্দোলন আরম্ভ হয়। কিন্তু এই আন্দোলন সহসা আবির্ভূত হইয়াছিল কোন ঐতিহাসিক এমন কথা বলিবেন না। কোন জাতির জীবনেই কোন বৃহৎ ঘটনা, কোন প্রচণ্ড যুগান্তকারী আন্দোলন অকস্মাৎ হয় না, তাহার পশ্চাতে দীর্ঘকালব্যাপী একটা সাধনার ইতিহাস নিশ্চয়ই থাকে। বাঙলার যুগান্তকারী স্বদেশী আন্দোলনের পশ্চাতেও যে এমনই একটা ইতিহাস আছে, তাহার পরিচয় ইতিপুর্বেই আমরা কিছু দিয়াছি। এইবার স্বদেশী আন্দোলনের অব্যবহিত পূর্বের কথা—বিশেষভাবে ১৯০০—১৯০৫ এই কয়েক বৎসরের কথা বলিব। এই যুগের নাম দেওয়া যাইতে পারে ‘স্বদেশী যুগের ঊষা’। সূর্যোদয়ের পূর্বে ঊষার আগমন, তখনও রাত্রির অন্ধকার ভাল করিয়া কাটে নাই, লোককোলাহল ভাল করিয়া জাগে নাই। তবে উদ্যোগপর্বের একটা সাড়া পড়িয়া গিয়াছে, পাখীর কাকলী শোনা যাইতেছে, পূর্বাকাশে অরুণের রেখা কেবল দেখা দিতেছে। বাঙলা দেশেও ১৯০০—১৯০৫ সাল এমনই একটা উদ্যোগ-পর্বের যুগ। এই যুগে রবীন্দ্রনাথ অন্যতম প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাঁহার সঙ্গে যোগ দিয়াছিলেন আরও কয়েকজন শক্তিমান পুরুষ।