৷৴৹
জাগিয়াছে, বাঙলা তথা ভারতের জাতীয় স্বাধীনতার আন্দোলনকেও হয়ত আধুনিক পণ্ডিতেরা আর একটু বড় করিয়া দেখিতে চেষ্টা করিবেন। স্বদেশপ্রেম ও স্বজাতিপ্রীতি যে তুচ্ছ জিনিষ নয়, ইহাও হয়ত ক্রমে উপলব্ধি করিতে পারিবেন। এবং তাহা হইলেই বাঙলার তথা ভারতের জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের দান যে কত মহৎ সে-কথাও তাঁহারা বুঝিতে পারিবেন।
বিশ্বপ্রেম, সর্বমানবপ্রীতি এ সমস্তই খুব বড় আদর্শ সন্দেহ নাই। কিন্তু স্বদেশপ্রেম ও স্বজাতিপ্রীতি যাহাদের নাই, তাহারা বিশ্বপ্রেম বা সর্বমানবপ্রীতির মূল্য বুঝিবে কিরূপে? যাহারা পরাধীন, দেশকে স্বাধীন করিবার দুর্দমনীয় আকাঙ্ক্ষা যাহাদের নাই, তাহাদের পক্ষে বিশ্বপ্রেম, নিখিল ভুবনের সর্বহারাদের দুঃখমোচনের কথা মুখে আনিবার কোন অধিকার নাই। গভীর দুঃখের সহিত বলিতে হইতেছে, আজ আমাদের তরুণদের সাহিত্যে স্বদেশপ্রেম ও স্বজাতিপ্রীতির কোন অভিব্যক্তি দেখিতে পাই না; ইহারা যে পরাধীন দেশ ও পরাধীন জাতির মধ্যে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, পরবশতার গ্লানি ও বেদনা ইহাদের মর্মে তপ্তশেলের মত বিঁধিতেছে, এমন কোন লক্ষণের প্রকাশ নাই, জাতীয় স্বাধীনতা লাভের তীব্র আকাঙ্ক্ষাও কোন “সাম্প্রতিক” কবি বা সাহিত্যিকের লেখার মধ্যে দূরবীক্ষণ লাগাইয়াও খুঁজিয়া পাই না। তৎপরিবর্তে একটা অবাস্তব আত্মকেন্দ্রিক সাহিত্যের সৃষ্টি হইতেছে, আধুনিক কবিতার নামে কতকগুলি দুর্বোধ্য শব্দসমষ্টি বাঙলা সাহিত্যকে প্লাবিত করিয়া ফেলিতেছে; ‘সন্ধ্যা ভাষায়’ রচিত বৌদ্ধ গান ও দোঁহার মতই এগুলি সাধারণ মানববুদ্ধির অগোচর অস্পষ্ট হেঁয়ালী বা প্রহেলিকা মাত্র। আধুনিক বা সাম্প্রতিক কবি ও সাহিত্যিকেরা এগুলিকে “নবযুগের ভাবধারার অভিব্যক্তি” বলিয়া যতই আত্মপ্রসাদ লাভ করুন;