বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:জাতীয় সাহিত্য - আশুতোষ মুখোপাধ্যায় (১৯৩৬).pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত
৬৩

আমার সমগ্র সামর্থ্য ব্যয় করিয়া সে শৃঙ্খল ভগ্ন করিব। মা আমার উন্মুক্ত চরণে, বনকুরঙ্গীর মত স্বৈর চরণে ইতস্ততঃ বিচরণ করিবেন, আর পুত্র আমি ‘মা মা’ বলিয়া তাঁহার পশ্চাতে পশ্চাতে বেড়াইব। যদি মায়ের চরণ নিগড়-মুক্ত করিতে না পারিলাম, তবে কিসের পুত্র আমি?—কুপুত্র আমি। তাই বাণীর বরপুত্র মধুসূদন সজল-নয়নে বলিলেন,

“ছিল নাকি ভাব-ধন, কহ লো ললনে,
মনের ভাণ্ডারে তার, যে মিথ্যা সোহাগে,
ভুলাতে তোমারে দিল এ তুচ্ছ ভূষণে!
কি কাজ রঞ্জনে রাঙ্গি কমলের দলে?
নিজরূপে শশিকলা উজ্জ্বল আকাশে।”[১]

লৌকিক ভাষায় অনুষ্টুপ্‌ ছন্দের প্রবর্ত্তনের ন্যায় বঙ্গভাষায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্ত্তন করিয়া মধুসূদন বাঙ্গালা কবিতার পথ অতি সুগম করিয়া গিয়াছেন। যতদিন বঙ্গভাষা ও বাঙ্গালী জাতি থাকিবে, ততদিন তাঁহার অমিত্রাক্ষরের মধুর বীণাধ্বনি শ্রুত হইবে। অনেকের কবিতা পাঠকালেই হৃদয়ের ওজস্বিতা যেন কর্পূরের মত ক্রমে উপিয়া যায়, ক্রমে শরীর ঝিমাইতে থাকে, দেহে অহিফেনের লক্ষণ প্রকাশ পায়, আর মধুসূদনের ওজস্বিনী কবিতা পাঠ করিয়া—

“উৎসাহে বসিল রোগী শয্যার উপরে।”[২]