পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপানযাত্রী

 বিদায় মাত্রেরই একটা ব্যথা আছে,― সে ব্যথাটার প্রধান কারণ এই, জীবনে যা কিছুকে সব চেয়ে নির্দ্দিষ্ট করে’ পাওয়া গেছে, তাকে অনির্দ্দিষ্টের আড়ালে সমর্পণ করে’ যাওয়া। তার বদলে হাতে হাতে আর একটা কিছুকে পাওয়া না গেলে এই শূন্যতাটাই মনের মধ্যে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সেই পাওনাটা হচ্ছে অনির্দ্দিষ্টকে ক্রমে ক্রমে নির্দ্দিষ্টের ভাণ্ডারের মধ্যে পেয়ে চলতে থাকা। পরিচয়কে ক্রমে ক্রমে পরিচয়ের কোঠার মধ্যে ভুক্ত করে নিতে থাকা। সেই জন্যে যাত্রার মধ্যে যে দুঃখ আছে, চলাটাই হচ্চে তার ওষুধ। কিন্তু যাত্রা করলুম অথচ চল্লুম না— এটা সহ্য করা শক্ত।

 অচল জাহাজের ক্যাবিন হচ্চে বন্ধনদশার দ্বিগুণ-চোলাই-করা কড়া আরক। জাহাজ চলে বলেই তার কাম্‌রার সঙ্কীর্ণতাকে আমরা ক্ষমা করি। কিন্তু জাহাজ যখন স্থির থাকে তখন ক্যাবিনে স্থির থাকা, মৃত্যুর ঢাকনাটার নীচে আবার গোরের ঢাক্‌নার মত।

 ডেকের উপরেই শোবার ব্যবস্থা করা গেল। ইতিপূর্ব্বে অনেকবার জাহাজে চড়েচি, অনেক কাপ্তেনের সঙ্গে ব্যবহার করেচি। আমাদের এই জাপানি কাপ্তেনের একটু বিশেষত্ব আছে। মেলামেশায় ভালমানুষিতে হঠাৎ মনে হয় ঘোরো লোকের মত। মনে হয় এঁকে অনুরোধ করে’ যা-খুসি-তাই করা যেতে পারে,— কিন্তু কাজের বেলায় দেখা যায় নিয়মের লেশমাত্র নড়চড় হবার জো নাই। আমাদের সহযাত্রী ইংরেজ