পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২
জাপান-যাত্রী।

তাকে হার মেনে হাল ছেড়ে তলিয়ে যেতে হবেই। প্রকৃতির গৃহিণীপনা কখনই কদর্য্য অমিতাচারকে অধিক দিন সইতে পারে না—তার ঝাঁটা এসে পড়ল বলে! বাণিজ্য-দানবটা নিজের বিরূপতায়, নিজের প্রকাণ্ড ভারের মধ্যে নিজের প্রাণদণ্ড বহন কর্‌চে। একদিন আস্‌চে যখন তার লোহার কঙ্কালগুলোকে আমাদের যুগের স্তরের মধ্যে থেকে আবিষ্কার করে পুরাতত্ত্ববিদ্‌রা এই সর্ব্বভুক দানবটার অদ্ভুত বিষমতা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ কর্‌বে।

 প্রাণীজগতে মানুষের যে যোগ্যতা, সে তার দেহের প্রাচুর্য্য নিয়ে নয়! মানুষের চামড়া নরম, তার গায়ের জোর অল্প, তার ইন্দ্রিয় শক্তিও পশুদের চেয়ে কম বই বেশী নয়। কিন্তু সে এমন একটি বল পেয়েচে যা চোখে দেখা যায় না, যা জায়গা জোড়ে না, যা কোনো স্থানের উপর ভর না করেও সমস্ত জগতে, আপন অধিকার বিস্তার কর্‌চে। মানুষের মধ্যে দেহ পরিধি দৃশ্যজগৎ থেকে সরে গিয়ে অদৃশ্যের মধ্যে প্রবল হয়ে উঠেচে। বাইবেলে আছে, যে নম্র সেই পৃথিবীকে অধিকার কর্‌বে― তার মানেই হচ্চে নম্রতার শক্তি বাইরে নয়, ভিতরে; সে যত কম আঘাত দেয়, ততই সে জয়ী হয়; সে রণক্ষেত্রে লড়াই করে না; অদৃশ্যলোকে বিশ্বশক্তির সঙ্গে সন্ধি করে সে জয়ী হয়।

 বাণিজ্য-দানবকেও একদিন তার দানবলীলা সম্বরণ করে মানব হতে হবে! আজ এই বাণিজ্যের মস্তিষ্ক কম, ওর হৃদয় ত একেবারেই নেই, সেইজন্যে পৃথিবীতে ও কেবল আপনার