পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী

নিঃশব্দে গোপনে, দেবতার চলার সঙ্গে স্তব্ধতার কোনো বিরোধ নই, এই জন্যেই অসীম অন্ধকার দেবসভার আস্তরণ। দেবতা রাত্রেই, আমাদের বাতায়নে এসে দেখা দেন।

 কিন্তু মানুষের কারখানা যখন আলো জ্বালিয়ে সেই রাত্রিকেও অধিকার করতে চায়, তখন কেবল যে মানুষই ক্লিষ্ট হয়, তা নয়,—দেবতাকেও ক্লিষ্ট করে তোলে। আমরা যখন থেকে বাতি জ্বেলে রাত জেগে এগ্‌জামিন পাশ করতে প্রবৃত্ত হয়েচি, তখন থেকে সূর্য্যের আলোয় সুস্পষ্ট নির্দ্দিষ্ট নিজের সীমান্য লঙ্ঘন করতে লেগেছি, তখন থেকেই সুর-মানবের যুদ্ধ বেধেচে। মানুষের কারখানা-ঘরের চিম্‌নিগুলো ফুঁদিয়ে দিয়ে নিজের অন্তরের কালীকে দ্যুলোকে বিস্তার করচে, সে অপরাধ তেমন গুরুতর নয়,―কেন না দিনটা মানুষের নিজের, তার মুখে সে কালী মাখালেও দেবতা তা নিয়ে নালিশ করবেন না। কিন্তু রাত্রির অখণ্ড অন্ধকারকে মানুষ যখন নিজের আলো দিয়ে ফুটো করে দেয়, তখন দেবতার অধিকারে সে হস্তক্ষেপ করে। যেন নিজের দখল অতিক্রম করে আলোকের খুঁটি গেড়ে দেবলোকে আপন সীমানা চিহ্ণিত করতে চায়।

 সেদিন রাত্রে গঙ্গার উপরে সেই দেববিদ্রোহের বিপুল আয়োজন দেখ্‌তে পেলুম। তাই মানুষের ক্লান্তির উপর সুরলোকের শাস্তির আশীর্ব্বাদ দেখা গেল না। মানুষ বল্‌তে চাচ্চে আমিও দেবতার মত, আমার ক্লান্তি নেই। কিন্তু সেটা মিথ্যা কথা—এইজন্যে সে চারিদিকের শান্তি নষ্ট করচে। এইজন্যে