পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী
৯৫

 ভােরের বেলা উঠে জানালার কাছে আসন পেতে যখন বসলুম, তখন বুঝলুম জাপানীরা কেবল যে শিল্পকলায় ওস্তাদ, তা নয়, ―মানুষের জীবনযাত্রাকে এরা একটি কলাবিদ্যার মত আয়ত্ত করেছে। এরা এটুকু জানে, যে-জিনিষের মূল্য আছে গৌরব আছে, তার জন্য যথেষ্ট জায়গা ছেড়ে দেওয়া চাই। পূর্ণতার জন্যে রিক্ততা সব চেয়ে দরকারী। বস্তুবাহুল্য জীবনবিকাশের প্রধান বাধা। এই সমস্ত বাড়িটির মধ্যে কোথাও একটি কোণেও একটু অনাদর নেই, অনাবশ্যকতা নেই। চোখকে মিছিমিছি কোন জিনিষ আঘাত করচে না, কানকে বাজে কোন শব্দ বিরক্ত করচে না,― মানুষের মন নিজেকে যতখানি ছড়াতে চায় ততখানি ছড়াতে পারে, পদে পদে জিনিষপত্রের উপরে ঠোকর খেয়ে পড়ে না।

 যেখানে চারিদিকে এলােমেলাে, ছড়াছড়ি নানা জঞ্জাল, নানা আওয়াজ,―সেখানে যে প্রতিমুহূর্ত্তেই আমাদের জীবনের এবং মনের শক্তিক্ষয় হচ্ছে, সে আমরা অভ্যাসবশত বুঝতে পারি নে। আমাদের চারিদিকে যা কিছু আছে, সমস্তই আমাদের প্রাণ-মনের কাছে কিছু-না-কিছু আদায় করচেই। যে সব জিনিষ অদরকারী এবং অসুন্দর, তারা আমাদের কিছুই দেয় না—কেবল আমাদের কাছ থেকে নিতে থাকে। এমনি করে নিশিদিন আমাদের যা ক্ষয় হচ্চে, সেটাতে আমাদের শক্তির কম অপব্যয় হচ্চে না।

 সেদিন সকালবেলায় মনে হল আমার মন কেন কানায়