বর্ণ রহস্য *C যে মাপ করিয়া দেন, তাহতে আমার আস্থা তার চেয়ে অনেক বেশী ; এবং ঐ প্রত্যক্ষ গাছটার অস্তিত্ব সম্বন্ধে আমার যে রকমের বিশ্বাস যতখানি আছে, আমার চক্ষুর অবিষয় আকাশের অস্তিত্ব সম্বন্ধে আমার সেইরূপ বিশ্বাস তার চেয়ে কোন অংশে কম নহে । এখন পদার্থবিজ্ঞান শাদা আলো ও রঙিল আলোর সম্বন্ধে কি স্থির করিয়াছে, দেখা যাউক । স্বর্য্যের আলো শাদা দেখায়, কিন্তু স্বৰ্য্যের আলো আকাশে এক রকমের ঢেউ নহে। উস্থার ভিতরে নানাবিধ ঢেউ আছে। নানাবিধ কি অর্থে ?—না, কেশনটা বা একটু বড়, কোনটা বা একটু ছোট । একই জলাশয়ের পৃষ্ঠে লম্বা লম্বা বড় বড় তরঙ্গ উঠিতে পারে, আবার খাট খাট ছোট ছোট উৰ্ম্মিও উঠিয়া থাকে ; কতকটা সেইরূপ । এই ছোট বড় নানাবিধ ঢেউ আসিয়া চক্ষুর ভিতরের একখানা স্নায়বীয় পরদায় ধাক্কা দেয় ; ও সেই ধাক্কা ক্রমে শেষ পৰ্য্যন্ত মস্তিষ্কের মধ্যে পৌছিয়া নানাবিধ অর্থাৎ নানাজাতীয় —কেমন তাহা ঠিক্ বলা যায় না—আণবিক গতির উৎপাদন করে । এবং এই এক এক রকম আণবিক গতির সঙ্গে এক এক রকম বর্ণের অনুভূতি জন্মে। রঙট হইল একটা মানসিক ব্যাপার ; গাছ হইতে রঙ আসে না, গাছ হইতে আসে ধাক্ক—বর্ণহীন ভ্রাণহীন নীরব ধাক্কা—তোমার পৃষ্ঠে কিল দিলে যেমন বর্ণহীন ভ্রাণহীন ধাক্কা উৎপন্ন হয়, ঠিক সেইরূপ ধাক্কা । এই ধাক্কা শেষ পর্য্যন্ত মস্তিষ্কে যায়, সেখানেও সেই ধাক্কাই থাকে ; কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মনের মধ্যে সেই বিকার—সেই অনুভূতি—রঙের অনুভূতি আসিয়া উপস্থিত হয় । ঠিক্ যেমন আমার হস্তপ্রযুক্ত কিলব্ধপী ধাক্কা তোমার পৃষ্ঠ হইতে মস্তিষ্কে সঞ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তোমার বেদনারূপী মানসিক বিকার বা অনুভূতির উৎপত্তি হয়, তেমনি। ফলে রঙটা আছে মনে ; উহা গাছে নাই, গাছ হইতে আগত ধাক্কা অথবা ঢেউগুলিতেও নাই। কোনটা
পাতা:জিজ্ঞাসা.djvu/৮৪
অবয়ব