পাতা:জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২ হিসেবে বিষণ্ণ সত্য, রয়ে গেছে তার ; এবং নির্মল ভিটামিন । সময় উচ্ছিন্ন হয়ে কেটে গেলে আমাদের পুরোনো গ্রহের । জীবনস্পন্দন তার রূপ নিতে দেরি করে ফেলে,— জেনে নিয়ে যে যাহার স্বজনের কাজ করে না কি— পরার্থের কথা ভেবে ভালো লেগে গেলে । মানুষেরি ভয়াবহ স্বাভাবিকতার সুর পৃথিবী ঘুরায় ; মাটির তরঙ্গ তার দু-পায়ের নিচে অধোমুখে ধ’সে যায় ;–চারিদিকে কামাতুর ব্যক্তিরা বলে : এ-রকম রিপু চরিতার্থ ক’রে বেঁচে থাকা মিছে । কোথাও নবীন অtশা র’য়ে গেছে ভেবে নীলিমার অনুকল্পে আজ যারা সয়েছে বিমান,— কোনো এক তনুবাত শিখরের প্রশান্তির পথে মানুষের ভবিষ্যৎ নেই—এই জ্ঞান পেয়ে গেছে ;–চারিদিকে পৃথিবীর বিভিন্ন নেশন প’ডে আছে ; সময় কাটায়ে গেছে মোহ ঘোচাবার আশা নিয়ে মঞ্জুভাষা, ডোরিয়ান গ্রীস, চীনের দেয়াল, পীঠ, পেপিরাস, কারণরা-পেপার । তাহারা মরেনি তবু ;–ফেনশীৰ্ষ সাগরের ডুবুরির মতো চোখ বুজে অন্ধকার থেকে কথা-কাহিনীর দেশে উঠে আসে ; যত যুগ কেটে যায় চেয়ে দেখে সাগরের নীল মরুভূমি মিশে আগছে নীলিমার সীমাহীন ভ্রান্তিবিলাসে । ক্ষতবিক্ষত জীব মর্মস্পর্শে এলে গেলে—তবুও হেঁয়ালি ; অবশেষে মানবের স্বাভাবিক সূর্যালোকে গিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ভেবে—উনিশশো বেয়াল্লিশ সাল ‘তেতাল্লিশ পঞ্চাশের দিগন্তরে পড়েছে বিছিয়ে । মাটির নিঃশেষ সত্য দিয়ে গড়া হয়েছিলো মানুষের শরীরের ধুলো ঃ তবুও হৃদয় তার অধিক গভীরভাবে হ’তে চায় সৎ ; ভাষা তার জ্ঞান চায়, জ্ঞান তার প্রেম,--ঢের সমুদ্রের বালি পাতালের কালি ঝেড়ে হ’য়ে পড়ে বিষন্ন, মহৎ ।