পাতা:জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳԵ বেদিয়া চুলি চালা সব ফেলেছে সে ভেঙে”, পিঞ্জর-হারা পাখী । পিছু-ডাকে কভু আসে না ফিরিয়া, কে তারে আনিবে ডাকি ? উদণস উধাও হাওয়ার মতন চকিতে যায় সে উড়ে', গলাটি তাহার সেধেছে অবাধ নদী-ঝর্ণর সুরে ; নয় সে বান্দ রংমহলের, মোতি মহলের বাদী, ঝডো হাওয়া সে যে, গৃহ-প্রাঙ্গণে কে তারে রাখিবে বাধি’ ! কোন সুদূরের বেনামী পথের নিশানা নেছে সে চিনে, ব্যর্থ ব্যথিত প্রান্তর তার চরণ-চিহ্ন বিনে ! যুগযুগান্ত কত কান্তার তার পানে আছে চেয়ে কবে সে আসিবে উষর ধূসর বালুকণ-পথটি বেয়ে', তারি প্রতীক্ষণ মেগে ব’সে অাছে ব্যাকুল বিজন মরু ! দিকে দিকে কত নদী-নিঝরি কত গিরিচূড়া-তরু ঐ বাঞ্ছিত বন্ধুর তরে আসন রেখেছে পেতে কালে মৃত্তিক ঝরা কুসুমের বন্দনা-মালা গেঁথে ছড়ায়ে পড়িছে দিক দিগন্তে ক্ষ্যণপণ পথিকের লাগি । বাবলো বনের মৃদুল গন্ধে বন্ধুর দেখা মাগি লুটায়ে রয়েছে কোথা সীমান্তে শরৎ উষার শ্বাস । ঘুঘু-হরিয়াল-ডাহুক-শালিখ-গাঙচিল-বুনোহাস নিবিড় কাননে তটিনীর কূলে ডেকে যায় ফিরে ফিরে বহু পুরাতন পরিচিত সেই সঙ্গী আসিল কি রে । তারি লাগি ভায় ইন্দ্ৰধনুক নিবিড় মেঘের কুলে, তারি লাগি আসে জোনাকী নামিয়া গিরিকদেরমূলে ঝিনুক নুড়ির অঞ্জলি ল’য়ে কলরব ক’রে ছুটে নাচিয়া আসিছে অগাধ সিন্ধু তারি দুটি করপুটে । তারি লাগি কোথা বালুপথে দেখা দেয় হীরকের কোণা, তাহারি লাগিয়া উজানী নদীর ঢেউয়ে ভেসে অণসে সোনা !