পাতা:জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা.djvu/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সৃষ্টির তীরে

বিকেলের থেকে আলো ক্রমেই নিস্তেজ হয়ে নিভে যায়— তবু
ঢের স্মরণীয় কাজ শেষ হ’য়ে গেছে:
হরিণ খেয়েছে তার আমিষাশী শিকারীর হৃদয়কে ছিঁড়ে;
সম্রাটের ইশারায় কঙ্কালের পাশাগুলো একবার সৈনিক হয়েছে;
সচ্ছল কঙ্কাল হ’য়ে গেছে তারপর;
বিলোচন গিয়েছিলো বিবাহ-ব্যাপারে;
প্রেমিকেরা সারাদিন কাটায়েছে গণিকার বারে;
সভাকবি দিয়ে গেছে বাক্‌বিভূতিকে গালাগাল।
সমস্ত আচ্ছন্ন সুর একটি ওঙ্কার তুলে বিস্মৃতির দিকে উড়ে যায়।
এ-বিকেল মানুষ না মাছিদের গুঞ্জরণময়!
যুগে-যুগে মানুষের অধ্যবসায়
অপরের সুযোগের মতো মনে হয়।
কুইসলিং বানালো কি নিজ নাম— হিটলার সাত কানাকড়ি
দিয়ে তাহা কিনে নিয়ে হ’য়ে গেল লাল:
মানুষেরই হাতে তবু মানুষ হতেছে নাজেহাল;
পৃথিবীতে নেই কোনো বিশুদ্ধ চাকরি।
এ কেমন পরিবেশে র’য়ে গেছি সবে—
বাক্‌পতি জন্ম নিয়েছিলো যেই কালে,
অথবা সামান্য লোক হেঁটে যেতে চেয়েছিলো স্বাভাবিক ভাবে পথ দিয়ে,
কি ক’রে তা হ’লে তা’রা এ-রকম ফিচেল পাতালে
হৃদয়ের জনপরিজন নিয়ে হারিয়ে গিয়েছে?
অথবা যে-সব লোক নিজের সুনাম ভালোবেসে
দুয়ার ও পরচুলা না এঁটে জানে না কোনো লীলা,
অথবা যে-সব নাম ভালো লেগে গিয়েছিলো: আপিলা চাপিলা
—রুটি খেতে গিয়ে তা’রা ব্রেডবাস্কেট খেলো শেষে।
এরা সব নিজেদের গণিকা, দালাল, রেস্ত, শত্রুর খোঁজে
সাতপাঁচ ভেবে সনির্বন্ধতায় নেমে আসে;
যদি বলি, তা’রা সব তোমাদের চেয়ে ভালো আছে;

৯৮