পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শোনো নি অাবার ? কতবার দেখেছ তাকে । ‘দেখেছি ? কোথায় ? অামার তো মনে পড়ছে না—” “যাও যাও—অামার পোষা সিংহটা কোথায় ?” ‘কী দরকার সেটাকে দিয়ে তোমার ? —“বলো, সেটা কোথায় ?” দেখতে-দেখতে সিংহ এসে হাজির হল । কেমন বিভ্ৰান্ত হয়ে খানিকটা পিছিয়ে গেলাম—তাকিয়ে দেখলাম, অন্ধকারে জ্যোৎস্নায় বাতাসে ডালপালার ভিতর দু-জনে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে—নারী আর তার অনুরক্ত সিংহ ; বাদামি শরীর, কেশর ফুল-ফুলে উঠছে । ডান দিকে তাকিয়ে দেখলাম, জানালার ভিতর দিয়ে সেই অবিরল খেজুরের সারি—তাদের দীৰ্ঘ নীলাভ ছড়ির ফঁাকের ভিতর থেকে চাদ এক-এক বার উকি দিচ্ছে । চাদ, হাতির দাতের ধূসর মূৰ্তির মত জ্যোৎস্না কেমন নীল, অনেক দূরে একটা পিরামিড, মৰ্মস্পৰ্শী অপরাপ বাতাস । ধীরে-ধীরে একটা বৰ্শ তুলে নিলাম । সিড়ি বেয়ে আস্তে-অস্তে প্ৰাসাদ থেকে নেমে গেলাম । বালির উপর দিয়ে হেঁটে-হেঁটে জ্যোৎস্নায় অন্ধকারে মামলুকের প্রাসাদে গিয়ে হাজির হলাম । কক্ষের থেকে কক্ষে ঘুরে কোথাও কাউকে দেখলাম না । কোথাও কেউ নেই । না, নেই কোথাও কেউ । হঠাৎ একটা প্ৰকাণ্ড সবুজ মখমলের পদা সরে গেল ; দেখলাম মেহগিনি কাঠের একটা টেবিলে খানিকটা ধুসর মেঘে মান ও নরম পূৰ্ণিমার চাদের মতন একটা বাতি জ্বলছে পাশেই মামলুক বসে অার তার স্ত্ৰী । এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ‘অঞ্জলি কোথায় ? ‘জানি না। —“সে-সিংহটাই বা কোথায় গেল ? ‘সে-সব খবর রাখি না। অামরা কিছু । একটু চুপ থেকে —“মামলুকের স্ত্ৰী সেজে বসেছ কেন তুমি অঞ্জলি ? অঞ্জলি হো-হো করে হেসে উঠল । রুপার পিলসুজ যেন শ্বেতপাথরের বুকে ভেঙে পড়ে -- বুকের সোনালি রঙের বাতিটা যায় নি৬ে, তাই এমনি আওয়াজ হয় তখন ।