পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার দিকে দাত খিচিয়ে ফিরে তাকিয়ে—‘এটা কে ? এরা শালা-ভায়রা একটা কিছু বুঝি? না মাসতুত ভাই? রাগে-বিরক্তিতে গজগজ করতে-করতে বিরাজ বই দুটােকে ঠেলে দিয়ে, আর একখানা বই টেনে নিয়ে পড়ে বললে—‘অলিভার টুইস্ট? চার্লস ডিকেন্স ? কী পরের বইখানা তুলে পড়তে-পড়তে—"ডেভিড কপারফিল্ড। চার্লস ডিকেন্স। এগুলো o' —‘নভেল |’ আমার দিকে অত্যন্ত বীতশ্রদ্ধভাবে তাকিয়ে—‘এই রত্নটি কে ?’ গম্ভীরভাবে—কার কথা বলছ ? —‘এই-যে, যার ভোগের থালা দিয়ে তাকখানা সাজিয়ে রেখেছ।’ —‘ডিকেন্স ?” —“হা, মই হার্টস সিক্নেস। ——‘ডিকেন্সের নাম শোনো নি বিরাজ ? — মানে তো শয়তান ।” సౌ ধাপ পরে গিয়ে বিরাজ আর-একখানা বই হাতে তুলে নিয়ে—‘এখানা ?’ ধীরে-ধীরে পড়ল—আনন্দমঠ। আরো পড়ল—‘বঙ্কিমচন্দ্র। আমার দিকে তাকিয়ে বললে—“হদ করল বাড়ির মধ্যে প্যাদা এসে। বইখানা অজ্ঞাতসারেই হাত থেকে পড়ে গেল বিরাজের; বইয়ের উপর দিয়ে পাতলুন চালিয়ে নিয়ে অনেকক্ষণ বসে তাকের আদ্যশ্রাদ্ধ শেষ করে। —‘ ...-এর কোনো খবর রাখো ? —‘অনেকক্ষণ তো বসলে বিরাজ। চা খাবে ?” —.-এর আর.এর মধ্যে বড্ড কষাকষি চল্লিশ বছরের বন্ধুত্ব এবার বুঝি টেশে।’ —“চা এনে দেই?’ বলতে-বলতে অনেকখানি ধোয়া ছেড়ে জমকালো গোফজোড়া একবার শানিয়ে নিয়ে শাদা তালিমারা ছাতাটা মাথায় দিয়ে বিরাজ শ্রাবণের অন্ধকারের মধ্যে বেরিয়ে পড়ল। বিরাজের মতো এমন অমূল্য জিনিশ সাবডিভিশানের কোর্টে নষ্ট হয়ে যায়। যদুনাথবাবু টাকাপয়সাওয়ালা লোক, বাপের বিপুল জমিদারি ছিল; অনেক খুইয়েছে, তবুও দেদার পড়ে রয়েছে; সারা জীবন এর টিকিও এদিকে কেউ দেখে নি; কাশ্মীর থেকে সিমলা, সিমলা থেকে কাশী এই ছিল তার পরিচিতি, এদিকে বড় একটা আসেন নি। বুড়ো বয়সে অবিশ্যি এখন দেশে এসে বসেছেন। সকালবেলা কোনো একটা ইলেকশন সম্পর্কে বাবার কাছ থেকে ভোটের জন্য যদুনাথবাবু এসে হাজির হলেন। বাবার সঙ্গে কথাবার্তা হবার পর আমার ঘরে ঢুকে বললেন—‘কী করছ? কিছু না? বাড়িতে চুপচাপ বসে আছ বুঝি ? একটা সিন্ধের পাঞ্জাবি গায়—সিল্কের উড়ানি, এক মাথা শাদা চুল, তার উপর > O8