পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নি রুপ ম যা ত্রা বছর চারেক পরে কলকাতার থেকে দেশে ফিরছে—সম্বল একটা টিনের সুটকেশ, রংচটা শতরঞ্জিতে মোড়া একটা বিছানা এবং মনিব্যাগে তিন টাকা সাড়ে ন আনার পযসা। একটা বিষয়ে খুব স্বাধীনতা আছে—কলকাতার থেকে চলে যাচ্ছে বলে কোনো উপরওয়ালার অনুমতির দরকার নেই; কোনো উপরওয়ালা নেই, চাকরির বিড়ম্বনার থেকে জীবন নির্মুক্ত—বেশ ঝরঝরে নির্মল দিনগুলো—যতক্ষণ ইচ্ছা নীল আকাশের দুপুর বেলা বসে উপলব্ধি করতে পারে। একটি অশ্বথ গাছের ছায়ায় কলেজ স্কোয়ারের একটা বেঞ্চিতে বসে সমস্ত সকাল অশ্বখের খড়-খড়ে ডাল-পালার ভিতর বাতাস ও বুলবুলিগুলোর গান শুনতে পায়—শুকনো পাতা ঝরে, সজীব পাতা গজায়, সবুজ বেঞ্চির ওপর খয়েরি রঙের, বাদামি রঙের পাতা উড়ে আসে, খানিকটা দূরে দেবদারু গাছটা ছোট নিটোল, শিমুলের ডালপালার পাতা নেই—অসংখ্য লাল ফুলের নিশান, কৃষ্ণ শিখার মতো কাকের পাখাগুলো সাপের ফণার মতো সারাদিন ঘুরছে, বিলম্বিত সকাল এখানে নির্বিবাদে কাটিয়ে দিতে পারা যায়—কেউ কোনো কৈফিয়ৎ নিতে আসবে না, রাস্তার ট্রামে-বাসে অফিসমুখী কেরানিদের জীবনের উধ্বশ্বাসকে একটা অবাঞ্ছিত বিকৃত অনিয়ম বলে মনে হবে, দেবদারু গাছের লীলা ও ভঙ্গি জীবনরচনার প্রণালী মনে হবে গভীর সত্যিকারের জিনিশ, অশথ-অশথের বুলবুলিগুলোর জীবন মেসের ছাদের ওপর মাদুর পেতে শুয়ে থেকে একটা দূর ভবিষ্যৎ জীবনের আভাস পেতে পারে—গোলদিঘির দেবদারু ও ওয়েলিংটন স্কোয়ারের পাম গাছগুলো যার আভাস পায়, এই শহরের শিশির ভেজা অজস্র কাকের নীড় এমনি গভীর গহন রাতে যে পরিপূর্ণতার স্পর্শে সুন্দর নিবিড় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। দিনগুলোকে এমনি ভাবে চালালেও চলে। চালাতে প্রভাতের কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু বিপদ এই যে সামান্য দাড়ি কামাতে, একটা দেশলাই বা পেন্সিল > > ○