পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অবাক হয়ে সে থমকে দাঁড়াল, নিরঞ্জন না? —‘কী মিস্টার ?’ —‘হ্যা হে, এ কিসের বস্তা তোমার পিঠে ? —আর কিসের ?” সেই থেকে ধোপার কাজ সে করছে। মাঝখানে ইস্টিমারের ডকে একবার কাজ পেয়েছিল—মাসে পনেরো টাকা মাইনের কাজ পেয়ে নিরঞ্জন আবার গোলাপবাহারি বাবুগিরি আপণ্ড করে দিল। কিন্তু অতিরিক্ত বাহাদুরি করার অপরাধে ডকের থেকে তাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। এর পর তার বয়স বাড়তে লাগল; বিয়ে করল—ছেলে-পিলে হল; লক্ষ করে দেখছিল প্রভাত—নিরঞ্জন ঢের বিজ্ঞ ও নিস্তব্ধ হয়ে উঠছে; মানুষের জীবনটাকে মনে মনে পর্যালোচনা করে সে—অত্যন্ত গম্ভীর নানা রকম সিদ্ধান্তে গিয়ে উপনীত হয়। প্রভাত তাকে ‘তুই’ বলে ডাকে, নিরঞ্জন প্রভাতকে ‘হুজুর’ বলে সম্মান করে—আপনি বলে সম্ভাষণ করে; হাত তুলে নমস্কার জানায়, যে আজ্ঞে’ বলে আদেশ গ্রহণ করে, এই সমস্ত সম্পর্কে একজনেরও কারো মনে কোনো খটকা নেই—ঘনিষ্ঠ কথাবার্তাও দুজনের মধ্যে কম হয় না। বছর চারেক আগে, দোলের দু-তিন দিন পরে সে এসেছিল, কতকগুলো রংমাখা জামা বের করে প্রভাত বলেছিল,—‘পারো কি এমন রং ওঠাতে—' সে নেড়েচেড়ে বললে—‘খুব পারব হুজুর। —‘গায়ে দেবার আমার একটা জামাও নেই কিন্তু, খুব শিগগিরই দিয়ে যাবি।’ —‘পরশুই দেব হুজুর। দিন পনেরো পর এসে সে হাজির। প্রভাতের শার্ট-পাঞ্জাবি-ফতুয়া সব কটিই গটরির থেকে বের করে নির্বিকার ভাবে একটা শতরঞ্জির ওপর রাখল নিরঞ্জন। লাল, নীল, সবুজ রঙের জলুশ জামাগুলোর গায়ে যেন আরো সুঠাম হয়ে উঠেছে। প্রভাত চোখ নরম করে—হারামজাদা এই কাচলে নাকি তুমি ? —‘হুজুর। —হুজুর কী রে শুয়ার, পাজি, উল্লুক, তুমি বললে পরশু দিয়ে যাবে, এনেছ পনেরো দিন পর, তাও এই রকম—’ —‘হুজুর, কাচতে দিয়েছিলাম আমার ভাইপোকে। —‘কেন, তাকে কাচতে দিলে কেন তুমি ? —ভাবলাম, ওকে লায়েক করে নেই—আমি মরলে পর ধোপার কারবারটা ওই তো রাখবে—’ —“বেশ একদফা মিথ্যা কথা বললে যে।’ —‘গতবার জামাইষষ্ঠীর সময় শ্বশুরমশাই আমার তত্ত্ব-তলব নিতে পারেন নি, মনে বড় দুঃখ ছিল তার, এবার তাই জামাই খাওয়ালেন।