পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—‘আমি দেশে যাচ্ছি।’ —‘কেন, সেখানে কোন উল্লুকের তিন হাত দাড়ি গজিয়েছে যে তোমার না কামালে চলবে না—’ • প্রভাত মাথা নেড়ে—না, সে হয় না কার্তিক—কলকাতায় আর থাকা যায় না—’ —‘টাকায় কামড়ায় তোমাকে ? ছেলেটা মাসে-মাসে ত্রিশ টাকা করে দেবে তোমাকে— —“তা দিলই-বা।’ —“বেশ তো, মেস-এর খরচ চলে যাবে তোমার।’ —তা চলে যাবে বটে। এই চার বছরও তো টিউশন করে মেসের খরচ চালিয়ে এলাম।” —“বেশ তো, কী আর করবে। চাকরির যা বাজার তাতে এইটুকুও তো ছোটখাটো একটি যজ্ঞ ফল ; পিতৃপুণ্য ছাড়া জোটে না।’ —তা আমি জানি। এ তিন মাস এই টিউশনটা নিয়ে থাকলে চাকরি খুঁজবারও সুযোগ পাওয়া যাবে। কিন্তু, কার্তিক, আমি আর কলকাতায় থাকতে পারি না—’ —"কেন ?? —“চার বছর আমি কাউকে দেখি নি কার্তিক, মাকে না, খোকাকে না, খোকার মাকে না।’ কার্তিক চুপ করে ছিল। প্রভাত—‘কেতু বলে একটা কুকুর আছে—সেটা হয়তো সারা দুপুর চনমন চুনমুখ?] করে ঘুরে বেড়ায়! আমাকে খোজে। কে জানে খেতে পায় কি না।’ দুজনেই চুপ। —‘প্রভাত, কেতু বেঁচে আছে কি না সে খবরও আমাকে কেউ দেয় না—নিজের স্বার্থের বাইরে মানুষ এত উদাসীন। কার্তিক কেস থেকে একটা সিগারেট বের করে জালাল। প্রভাত—শশানে বাবার ভস্মের ওপর গোটা দুই ইট আছে ; কে জানে জঙ্গলে ভরে গিয়েছে হয়তো! দুটাে ইট শুধু তার, নীচে কী, কে জানে? মৃত্যুর পর আমাদের কী হয় ? কী হয় কার্তিক ? হয়তো এই টেবিলটা, এই দেয়ালটা, এই সিগারেটের ছাইয়ের মতোই অস্তিত্ব নিয়ে পড়ে থাকি। কিন্তু তবু এক-এক দিন কিছুতেই টিকতে পারি না যেনই এখানে ; মাঝরাতে বিছানার থেকে উঠে বসি—মনে হয় বাবা যেন আমাকে দেশে তার ঘরে গিয়ে বসতে বলছেন—শ্মশানে তার চিতা বেড় দিয়ে সাপের বিড়ের মতো বনৰ্চাড়াল আর মনসা কাটার জঙ্গল সব—হয়তো-বা তার নীচে মৃতের তবুও—তবুও—কার্তিক।’ কিন্তু কার্তিকের ইচ্ছাই টিকল— তিন মাসের জন্য সমীরকে পড়াবার কাজে প্রভাতকে বহাল করে সে চলে গেল। তিনটি মাস বড় সহজে কাটতে চায় না— এক-এক দিন দুপুরবেলা মনে হয় ; কমলার তো বিশেষ কোনো ব্যাকুলতা নেই >こbr