পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিনি—পেনশন পান—শ্মশানে যেতে র্তার আপত্তি নেই—কিন্তু কেউই যখন যাচ্ছে না তখন একা গিয়ে আর কি হবে ? ম্যানেজার—আমিই বা মেস ছেড়ে যাই কী করে ? অফিসের চাকুরেরা খুব তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল আজ। বিষ্ণুপদ থাকলেও থাকতে পারত—কিন্তু শেষ পর্যন্ত সকলেই যখন চলে গেল তখন কী আর করে সে—বেরিয়ে পানের দোকানে এক পয়সার কেনাকাটা করে। রাতে দাহ হবে ঠিক হল। প্রভাতের কামরার দরজায় ম্যানেজার একটা তালা আটকে চলে গেল। সমস্ত দুপুর ঠাকুর-চাকরেরা এক-একবার এসে মড়া দেখে যায়—বারান্দায় থুথু ফেলে—ম্যানেজার এক-একবার তেতলার থেকে দোতলায় নামতে-নামতে, দোতলার থেকে তেতলায় উঠতে-উঠতে মড়ার চোদপুরুষ উদ্ধার করে— কলতলায় চাকরবাকরদের জটলা হয়—থালা-বাটি-গেলাশ ঝন-ঝন করে আছাড় খেয়ে পডে— ক্রমে দুপুর আরো নির্জন হয়ে ওঠে। সমস্ত মেস নিস্তব্ধ; রান্নাঘরে চাকরবাকরদের নাকডাকার শব্দ, বারান্দায় রেলিঙে কতকগুলো চড়াইয়ের নীরব নির্বিবাদ জীবনোপভোগ— সমস্ত মেসের ভিতর জনপ্রাণী একটিও নেই—কেবল হরিদাসবাবুর ছোট ছেলে ও ছোট মেয়েটি এক-একবার আতিশয্যে প্রভাতের ঘরের দিকে টিপিটিপি খানিকটা এগিয়ে যায়—পর ভূত-ভূত বলে চিৎকার করে উর্ধ্বশ্বাসে পালিয়ে আসে; আবার এগিয়ে যায়, আবার পালিয়ে আসে— ঘণ্টার পর ঘণ্টা সমস্ত দুপুর—তাদের এই চিত্তাকর্ষক খেলা চলে। প্রভাতের রুদ্ধঘরে মাছির ভনভনানি, অসহ্য গুমোট ও মশা এক-এক সময় মৃতের পক্ষেও যেন অসহ্য হয়ে ওঠে— পৃথিবীর বাজ পাখির নয়—চড়ুই পাখি, শালিখ পাখি, এই উদাসী, করুণ, সংসারের কর্তব্য সংগ্রাম নিষ্পেষিত বন্ধনাত্মা যুবক কোনোদিন তার প্রমত্ততম কল্পনায় মনে করে নি যে এই মেসে সে মরবে—তার মৃত্যুর পর মেসের একটা দিন এই রকম নিমতলায় তাকে পোড়াতে যাবে— >W)a