পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেই দুধ তুমি এতটা পথ বয়ে আনলে আমার জন্য। বিক্ষুব্ধ ঝাঝে আমার দিকে আপাদমস্তক তাকাতে লাগল সে। কই, তুমি তো একবারও বলো নি কল্যাণী ? ‘কী বলি নি।’ যখন পয়সা দিলে, বলো নি তো যে—’ কিন্তু খোচা দিয়ে ভুল দেখিয়ে এই নারীটিকে পরাস্ত করে কী লাভ ? বাদলের দুপুরে এক-একটা নিরাশ্রয় দাঁড়কাক আমাদের উঠোনের পেয়ারার ডালে বসে ভিজতে থাকে, তাকে দান করতে হয়, কেউ কোনোদিন তার কাছ থেকে গ্রহণ করবার কথা ভাবতে পারে কি ? আমি এক কাপ চা খেয়ে এসেছি; আর একটা চুরুট।’ ‘কে? তুমি? দুধ খেলে না কেন? দুধের জন্যই তো পয়সা দেওয়া। তোমার শরীরের দিকে তাকিয়ে দুঃখ হয়। বৃষ্টিতে ভিজে নেয়ে এলে, সব করলে, তবু আমার কথাটা শুনলে না।’ দুধ তোমার জুড়িয়ে যাচ্ছে, বক-বক বক-বক বক-বক কথাবার্তা পরে হবে। —আগে খেয়ে নাও।” গ্লাশটা তার হাতে দিলাম। বাঃ, এই গ্লাশটা কার? বেশ সুন্দর কাচের গ্লাশ তো’ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললে, ‘তুমি খাও। চুপ করে বই পড়ছিলাম। কল্যাণী, তুমি নাকি আবার চা খেয়ে এসেছ, চুরুটও?’ গেলাশটা সে ঠোট অদি তুললে, কই কথার উত্তর দাও না যে? ‘কোন কথা ?” চা-চুরুট খেয়ে পেট ভরিয়ে আস নি?’ ੀ’ তা যদি না-ভরতে তা হলে নিশ্চয়ই তোমাকে দুধ খেতে হত। আমি কি আমার জন্য আনিয়েছি, এটা তুমি বুঝলে না? তাকিয়ে দেখি দুধ তখনো অভুক্ত। কাজেই, রামেশ্বরের ছেড়া ছাতাটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম—আমি চলে না গেলে এ বেচারির দুধ আর খাওয়া হবে না। কল্যাণী—“কোথায় যাচ্ছ ?” রমণীবাবুর বাড়ি’ ‘কেন ?” ‘একটা বই নিয়ে গিয়েছিলেন।’ মিনিট পনেরো পরে ফিরে এসে দেখি দুধের গ্লাশ যেমনি, তেমনি। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম—‘এখনো খাও নি?’ ‘নাঃ’ >b"