পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

থেকেই একে-একে পড়ে-পড়ে খুঁজে পাওয়ার পর দেখা গেল পাণ্ডুলিপি-পাঠের সঙ্গে কোনো-কোনো কবিতার প্রকাশিত পাঠের পার্থক্য অনেকখানি–পাণ্ডুলিপির স্বতন্ত্র নামেরও বদল ঘটেছে। সে কারণেই এই কবিতাগুলির পাণ্ডুলিপি-পাঠ আমরা এখানে প্রকাশ করছি। প্রকৃতপক্ষে, জীবনানন্দ সমগ্র’-এর মতো পরিকল্পনা কোনো সময়েই হয়তো একক সম্পাদনায় সম্পূর্ণ হতে পারে না, খুব আংশিক শুরু হতে পারে মাত্র। ভবিষ্যতের সম্পূর্ণতর সংস্করণের জন্যে যত বেশি তথ্য সাজিয়ে দেয়া যায়, ততই ভালো। পাণ্ডুলিপি কপি করার কাজে কল্যাণীয়া অশোকা শিকদার ও তীর্ণ রায়-এর উৎসাহী সমর্থন ও প্রফ পরীক্ষায় আফসার আমেদ-এর সাহায্য এই খণ্ডে খুব ভরসা দিয়েছে। উপন্যাস কারুবাসনা ১৯৩৩-এর আগস্টের দুটি খাতায় উপন্যাসটি লেখা। যেমন জীবনানন্দের পাণ্ডুলিপিতে দেখা যায়, এই খাতা দুটির নামপত্রে তার নিজের নাম, বরিশাল ও মাস-বৎসর ইংরেজিতে লেখা—সবচেয়ে ওপরের a novel I ও a novel II। প্রথম খাতায় ১১৫ ও দ্বিতীয় খাতায় ১২২ পৃষ্ঠা লেখা—পিঠোপিঠি, কিন্তু মাঝে মধ্যে ছেড়েছেড়ে। এই খণ্ডটির ৬৮ পৃষ্ঠার প্রথম ছ-লাইনের পর যে বিরতি আছে—সেটাই দুই পাণ্ডুলিপি সীমা। উপন্যাসটি থেকে একটি পদ নিয়ে আমরা উপন্যাসটির নামকরণ করেছি। জীবননান্দ সাধারণভাবে তার উপন্যাসে, চিত্তা ও বর্ণনার অংশ ও সংলাপের অংশের মধ্যে, গভীর কোনো মিশ্রণ ঘটান না এবং উপন্যাসের প্রগতি প্রায়ই তিনি ঘটাতে পারেন এই দুই অংশের সমানুপাতিক অনায়াস বিন্যাসে। কিন্তু পুরো উপন্যাসটি প্রধান চরিত্রের সঙ্গে তার বাবা, মা, মেয়ে, স্ত্রী, কাকা, বন্ধু ও গ্রামবাসীর এমন সংলাপে-সংলাপে গড়ে ওঠার এই গঠন জীবনানন্দেও খুব সুলভ নয়। বেশিরভাগ চরিত্রের সঙ্গে সংলাপ ঘটেছে একাধিক, এবং দুই সংলাপের মধ্যে তেমন কোনো গুরুতর ঘটনাও ঘটে না, কিন্তু উপন্যাস তার নিজস্ব গতি পায় এই একাধিক সংলাপেরই বিরোধাভাসে। প্রধান চরিত্র উত্তমপুরুষে কথা বলেছে। কবিতা-লেখায় জীবনব্রতী এক প্রধান চরিত্র উত্তমপুরুষে কথা বলে যায় বলেই এই উপন্যাসে অনেক সময়ই ডায়েরিজার্নালের প্রকৃতি যেন বেশি ধরা পড়ে। জীবনানন্দ নিজেই এ-রচনাকে 'novel' বলে চিহিত করে না-গেলে মনে হতে পারত যে তিনি সব আড়াল ভেঙেই নিজের জীবনের কোনো-এক সময়ের ডায়েরি রেখে গেছেন। জীবনানন্দের উপন্যাসে তার আত্মজীবনীর প্রয়োগ সম্পর্কে কোনো ধারণা বা আন্দাজ থেকেই মাত্র, এই উপন্যাসটির এমন জার্নালধর্ম ঠিক বুঝে ওঠা যায় না, যদিও তার জীবন সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহের ভিত্তি ছাড়া তেমন আন্দাজও অর্থহীন। እ» ፄwይ