পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তুমি যে আর খেতে পারবে না।’ তা, আমার খেতে আপত্তি নেই।’ ছি, আমার মুখেরটা o” তা আমি খেতে পারি? কিন্তু আমি কিছুতেই সে অনাচার হতে দিতে পারি না তো। আধ ঘণ্টা পরে তাকিয়ে দেখলাম দুধের শূন্য গ্লাশটা পড়ে আছে, কল্যাণী নেই, ঘুমুচ্ছে হয়তো। গেলাশটা ধুয়ে নিয়ে ফিরিয়ে দেবার জন্য বিনয়ের দোকানের দিকে হাটতেহাটতে কল্যাণীর কথাই ভাবছিলাম। এই কল্যাণী আমার স্ত্রী, তিন বছর আগে আমি বিয়ে করেছি তাকে, কিন্তু এ তিন বছরের ভিতর প্রেমিকের পুলক একদিনও বোধ করেছি? নির্বিকার নিঃসঙ্কোচে আত্মদান অনুভব করেছে কল্যাণী ? ইস, গ্লাশটা হাতের থেকে পড়ে ভেঙে গেল। কাচের টুকরোগুলো কুড়োতে-কুড়োতে কল্যাণীর কথাই ভাবছিলাম আবার। আমাদের রক্তমাংসের সার্থকতা খাবার সময়, দাড়াবার সময়, হাটবার-চলবার সময়। আমাদের বুদ্ধি ও কল্পনার সার্থকতা মানুষের সঙ্গে আচারে-ব্যবহারে কিংবা সন্ধ্যা ও ভোরের আকাশ প্রান্তরের নিরবয়ব, অবাস্তবতার দিকে তাকিয়ে। স্বামীস্ত্রীর সম্পর্কে আমাদের রক্ত-মাংস বুদ্ধি-কল্পনা আত্মা-প্রেম কোনো কিছুরই প্রয়োজন নেই। সব জায়গাতেই কি এই রকম ? জানি না। এই চৌত্রিশ বছরে অনেক চিঠি জমিয়েছি; একটা মস্ত বড় টিনের বাক্সে চিঠিগুলো রেখে দিয়েছিলাম। চিরদিনেই মনে করে এসেছি যে ভবিষ্যতে কোনো এক দিন এই চিঠিগুলো একে-একে পড়ব। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কোনো এক বিস্তৃত প্রান্তরে আমার বাংলো তৈরি করব। চারদিকে বাবলাগাছের ঘন নিবিড় বেড়া দিয়ে মাঠটাকে রাখব ঘিরে। কিংবা বুনো কাঠ দিয়ে; ছোটখাটো নানা ঝুমকোলতা, কুঞ্জলতা ও অপরাজিতার আলিঙ্গনে আলো-বাতাস কাক-শালিখ ও পাখ-পাখালির সাড়া-শব্দে নিতান্তই বাঙালির ঘরোয়া জিনিশ, পাশে হয়তো মেঘনা, ধানসিঁড়ি, জলসিঁড়ি, কর্ণফুলি, অথবা ইছামতী, ૨૦