পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘সে অনেক দিন, সঙ্গে কতকগুলো চীনে বাজারের জুতো রাখতে হয়। আমি যখন যে স্থলে বেরুই এই জুতো নিয়ে বেরুই। এই তো, যে-জুতোজোড়া পরেছি এ তো অক্সফোর্ড নয়, চিনেম্যানের তৈরি। ‘খুব চরিতার্থতায় দিন কাটছে আপনার। আমার ? ঈষৎ ভূকুটি করে মেজকাকা বললেন, ‘কেটে যাচ্ছে এক রকম। 'অদৃষ্টের দোষ দেই না। কাউকেই গালিগালাজ করবার প্রবৃত্তি হয় না।” ‘কেন দেবেন? সবাই আপনাকে দুহাত ভরে দিয়েছেন।” - স্থা অর দেন নি অবিশ্যি। তবে নেমকের চামচের এক চামচে দিয়েছেন I’ হাসছিলাম। قرية মেজকাকা—“যে যা-দিয়েছেন, সে কৃতজ্ঞতা সব সময় স্বীকার করো। তোমরা তো এখানে সকাল বেলা মুড়ি খাও। যে-চালের ভাত খাও আমাদের ওখানে চাকর খানশামাও তা খায় না।’ আপনার জন্য তো বাবা কয়েক সের দাদখানি চাল এনে রেখেছেন।” তা এনেছেন বটে; আমাকে দাদখানিই দেওয়া হয়, না হলে আমার অম্বল হয়। বউঠানও খুব রেধে-বেড়ে খাওয়াচ্ছেন আমাকে। কিন্তু এ হল আমার জন্য তোমাদের স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। তোমরা নিজেরা বারোমাস যা-খাও তা দেখলে আমাদের ছকুর অদি চক্ষুস্থির হত। ছকু কে? আমাদের বয়; বিহারে বাড়ি, ছাপরা জেলায়, সেখানেও সে তোমাদের চেয়ে ভালো খায়।’ একটু চুপ থেকে—সাধনাশ্রমে কেমন খাওয়া হত? সে কথার কোনো উত্তর না দিয়ে কাকা—মুড়ি যে আমি না খাই তা নয়, মাঝেমাঝে খেতে ভালোও লাগে—কিন্তু এই যে সকালবেলা উঠে তোমরা ডাস্ট দিয়ে চা আর মুড়ি নিয়ে বোসো, দেখে আমার বড় দুঃখ করে। আমার ওখানে ভালো দার্জিলিং চা কিংবা লিপটনের কফি, রোল, মাখন, ডিম এই তো ব্যবস্থা— একটু চুপ থেকে, তারপর নটার সময় আসে, তাকিয়ে দেখলাম, চোখ পরিতৃপ্তি ও আত্মমর্যাদায় ভরে উঠেছে, বললেন, তারপর এগারোটার সময় সবচেয়ে টাটকা মাছ-মাংস, ডালতরকারি, ভাজি, চাটনি। দাদার মতো মিছিমিছি জীবনটাকে বঞ্চিত করে কী লাভ। না, কোনো লাভ নেই।’ ‘একটা কষ্ট। খেয়ে-খেয়ে আমার গাউট হয়েছে? ” থেকে, ‘বৌমাকে তুমি একটু বলো তো— ?’ আচ্ছা।’ কলকাতায় দিত ছকু মালিশ করে। কিন্তু এখানে তো তোমাদের কোনো চাকরবাকর নেই?’ না, চাকর আর রাখা হয় নি।’