পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ੀ’ এই অন্ধকার ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ? এ কি আজ নতুন, ঠাকুরপো। ‘তোমাদের কর্মের ভোগ ভোগো গিয়ে। আশা করি আসছে জন্মে তোমাদের মেজবউয়ের মতো খোচকপাল নিয়ে পৃথিবীতে আসবে। ‘খোচকপালে নয়নখান চিরকাল’—বলে হাসতে-হাসতে মা অন্ধকারের মধ্যে নেমে পড়লেন। আমিও চলে যাব ভাবছিলাম; মেজকাকা র্যাগটা টেনে নিযে গায়ে-পায়ে ভালো করে জড়িয়ে, বালিশে ঠেস দিয়ে, এই অন্ধকারের ভিতর সিদ্ধ ব্রাহ্মণরা সব ঘুরে বেড়াচ্ছেন বুঝলি। ‘কোথায় বেড়াচ্ছেন ?? * !' পিসিমা একটু সন্ত্রস্ত হয়ে, তার মানে ? ‘ও কীরে ভয় পেয়ে গেলি ?’ তুমি ভূতের কথা বলছ? ব্রাহ্মণ মানে বুঝি ভূত? আচ্ছা হাবা’ তবে কী মেজদা ?’ না রে বাবা আমাকে জড়াতে আসিস নি; মেয়েলোক আর পেত্নীর কাণ্ডে ঢের ঘেন্না আমার। ওই চেয়ারটায় গিয়ে বোস। ব্রাহ্মণের মানে বলে দিচ্ছি।’ পিসিমা গিয়ে বসলেন। মেজকাকা—“রাতের বেলা নামটা নেব?’ ওঃ বুঝেছি, থাক, নাম নিয়ে দরকার নেই।’ কিংবা রাতের বেলা লতা’ বললেই হয়। লতার ভিতর ব্রাহ্মণও আছে জানিস। পিসিমা ভুরু কপালে তুলে বললেন, ‘থাক মেজদা, এসব থাক এখন।' ‘গোখরো সাপ জাতে ব্রাহ্মণ, কালনাগিনী ব্রাহ্মণী। আমার ঘুম পাচ্ছিল। ঘাটের সিঁড়িতে অন্ধকার বৃষ্টির মধ্যে মা এত বছর ধরে তো অলৌকিক উপায়ে রক্ষা পেয়ে আসছেন। গভীর রাতে ঘরের ভিতর একবার নিঃশব্দ পায়ের সঞ্চার শুনি। সুপুরি কাটার শব্দ, গুনগুন করে খানিকটা গান; বুঝি মা সারাদিনের কাজ সেরে ঘরে ফিরেছেন; এমনি করে চৌত্রিশ বছর দেখলাম; একদিন যদি এই স্নিগ্ধ আশ্বাস ও উপলব্ধির পথে অন্ধকার বাধা এসে আঘাত দেয়, তা দিতে পারে; সৃষ্টির নিয়মই তো আঘাত দেওয়া। বেদনা ও অক্ষমতার কী গভীর সমুদ্র চারিদিকে; উপহাসের কী অপরিসীম ধূসর পাণ্ডুর দিনবলয়। এমনি বাদলের অমাবস্যার রাতে (সকলেই তো আর নৈনিতালের উজ্জ্বল হোটেলে ভগবান ও সৌন্দর্যের সন্ধানে যেতে পারে না) কত চাষি ধানের খেতে ফিরছে, পাটের চারার ভিতর ঘুরছে; কত বধূ খাল-বিলের কাছে বসে। পরদিন সকালবেলা বাবা, এই তো তোমার কাকা এখানে রয়েছেন। ইনি থাকতেথাকতে একে চাকরি-বাকরির কথা বলো না!" চুপ করে ছিলাম। \S)\S)