পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিছু না বলে পিসিমা হন হন করে চলে যাচ্ছিলেন। মা ডাক দিলেন—দাঁড়ালেন না, কিংবা পিছে তাকালেন না। —“তোমার দাদা তোমাকে ডাকছেন। পিসিমা ফিরে এলে, বাবা—‘কই আমি তো তোমাকে ডাকি নি।’ মা বিহ্বল হয়ে বললেন— আচ্ছা বেশ, আমিই ডেকেছি—আমার ডাক বুঝি শুনতে নেই?’ বলে ঝুপ করে পিসিমার থানের আঁচলখানা ধরে নিজের মুঠির মধ্যে গুছিয়ে নিয়ে কানে-কানে কথা বলতে-বলতে গলাগলি হয়ে পেয়ারা গাছটার দিকে চলে গেলেন দু-জনে। পেয়ারা তলায় দাড়িয়ে আধঘণ্টা কথাবার্তার পর পিসিমা পাড়ার দিকে চলে গেলেন। মা এসে বললেন, “শুনছ?" বাবা খাতার থেকে মুখ তুলে তাকালেন। —'চামার বলুক, কশাই বলুক, আমাদের অভদ্র সেজে কী লাভ? বাবা চোখ নামিয়ে লিখতে লাগলেন। —“রাগ করেছ?” —ওই রকমই বলে।’ —“আমাকে বললে বাজারের...।” কল্যাণী চলে যাচ্ছিল। মা একটু থমকে থামলেন। বাবা—‘কল্যাণী চলে গেল যাক, এ সব প্রসঙ্গ তুলে কোনো লাভ নেই, আমার ইস্কুলের বেলা হয়ে যাচ্ছে।’ —“আজ যে দুধ খেলে না, ক-দিন ধরে দুধ খাচ্ছ না যে? —দুধ হজম হচ্ছে না।’ —‘চা আর মুড়ি তো খুব হজম হয়। —আচ্ছা, এর মানে ডিকশনারিতে দেয় নি কেন খোকা ? —‘এটা কার ডিকশনারি ? —‘অক্সফোর্ডই তো’ -—“দেয় নি ? কী জানি।’ —“কোথায় পাব তবে ?” —‘নিউ ইংলিশ ডিকশনারিতে আছে হয়তো। —‘হ্যা। তা কোথায় পাই’ —‘এখানে কারো আছে বলে তো মনে হয় না।’ বাবা একটু চুপ থেকে—‘নবাব হামাম মিঞার খুব বড় ডিকশনারি আছে।’ —আছে নাকি? —আগে তো ছিলেন নদীর দক্ষিণ দিকে এক চর, না শকুন চর, কী বলে তারই পাশে। ዓ 6: