পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

—‘মেসের ঘরে চুপচাপ বসে থাকতে পারি না আমি আর। চাকরটাকে দু-পয়সা বকশিস দিই—বলি, রাস্তার কলে এক বালতি জল তুলে আনতে, তাই দিয়ে স্নান —“কোথায় যাও ?? * F —“দুপুরবেলা কোথায় আর যাব ? সম্ভাব্য সমস্ত জায়গাই সাত বছর ধরে গিয়ে দেখে এসেছি। ওয়াই-এম-সি-এ-তে গিয়ে কাগজ পড়ি খানিক। রেইনট্রি গাছের নীচে গোলদিঘির বেঞ্চিতে গিয়ে বসি। আকাশ, মেঘ, দিঘির জল, চারপাশের ফুলের কেয়ারি ও দেবদারুর ডালপালার দিকে তাকাই। মনে হয় পৃথিবীটা তো সুন্দর ছিল, মানবজীবনের সম্ভাবনাও ছিল চমৎকার। এত সহজে বসে উপলব্ধি উপভোগ করছি এ তো ঢের, কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে মাছির মতো মনে হবে, অন্ধকারের মধ্যে একটা অন্ধ গুবরে পোকার যতখানি নিস্তার তার চেয়ে একটুও বেশি পথরেখা দেখবার উপায় থাকবে না।” गां... —‘কয়েক মিনিট বসে থাকতে-থাকতে জীবনটা কেমন ছটফট করে ওঠে, আবার বেঞ্চির থেকে উঠে গিয়ে ফুটপথে দাড়াই। রাস্তা পেরুতে গিয়ে দেখি একটা বাস আর-একটু হলেই আমাকে গিলে ফেলছিল আর কি। —‘কলকাতার পথে খুব সাবধানে চলতে হয়।’ —‘হ্যা সাবধানে বরাবরই চলি। তবে মাঝে-মাঝে মনটা কেমন অন্যমনস্ক হয়ে থাকে।” —“বাসের ধাক্কা খেলে তো আর রক্ষা নেই।’ —‘অবিশ্যি সম্ভাবনাটা খুব কম। —‘ফুটপথ দিয়ে চলো।’ একটু চুপ থেকে—তারপর চায়ের দোকানে গিয়ে বসি। —“দুপুরবেলাও চা পাওয়া যায়? —“হ্যা, চবিবশ ঘণ্টা। —“কিন্তু দুপুরবেলা চা খেতে ইচ্ছে হয় তোমার ? —‘ওখানে থাকতে তো মাসের মধ্যে দু-চার দিন যাই।’ একটু হেসে—“তুমি আছ, বাবা আছেন, খুকি আছে, তার মা আছে— চারদিকে আমার কল্যাণের মতো রয়েছ তোমরা, এ কথা ভাবতে গিয়েই মন তৃপ্তি হয়ে থাকে। মনকে প্রবোধ দেবার জন্য কোনো অনাবশ্যক কথা বা ঘুষের দরকার হয় না এখানে ? ૪.... —কিন্তু কলকাতায় মনটাকে স্থির করবার জন্য এমনি সব ছোটখাটো ঘুষের দরকার হয়ে পড়ে।' মা..., —চায়ের দোকানে অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকি। —“দুপুরবেলা আরো অনেকে চা খায় ? -*ॐीं ।' —‘ক্রমাগত মানুষ এসে খেয়ে যাচ্ছে।’ -'रॅी' ৯৬