পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শাল পাতা কেটে চলেছে, বিড়ি তৈরি করবে।’ રીં.... ■ 疇 —‘এক-এক দিন রেসের মাঠে যেতে ইচ্ছা করে। মা –কিন্তু যাওয়া হয়ে ওঠে না আর মাঠটা কোথায় তাও ঠিক জানি না। মা —‘তিন টাকার টোটে এমন চল্লিশ-পঞ্চাশ টাকা পেয়েছে এক-এক দিন খবরের কাগজ খুলে দেখতে পাই, অবাক হয়ে ভাবি দুই-তিন মাসের টিউশানের টাকা পাঁচ মিনিটেই পেয়ে গেল? উৎসাহ ও উত্তেজনার কলরবের ভিতর ? প্রলুব্ধ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি খানিকক্ষণ—কিন্তু স্থির হয়ে নিজের স্বতন্ত্র জগতের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিতে হয়—তা না হলে বাঁচতেও পারব না যে।’ પીં.... মা অবশ্য রেসকোর্স, রেস বা টোটের কোনো মানেও জানেন না। —"লটারির টিকিট কলকাতায় গিয়ে ইদানীং কিনছি—এক টাকায় চার আনা পাওয়া যায়, আট আনার কিনি।’ —”টিকিট কিনলে কী পাওয়া যায় ?” —‘কপালে যদি থাকে আট-দশ হাজার টাকাও জুটতে পারে।” —‘আট আনার টিকিটে?" —‘একখানা চার আনার টিকিটেও। —তাই নাকি? তাহলে তো সে বড় সৌভাগ্যের কথা।’ —কিন্তু কয়েকবার কিনে-কিনে দেখেছি—শুধু টিকিটের পয়সাটাই যায়; এখন বিশ্বাস হারিয়ে গেছে, কিনব না আর।’ —“আরো দু-তিন বার কিনলে পার। —‘মাঝে-মাঝে মনে হয় দু-একজন মাড়োয়ারির পকেট কেটে নিলে পারি। — এমন কথাও মনে হয় তোমার ?’ —“হা, অত্যন্ত অবসাদ নিরাশার মুহুর্তে কিছুক্ষণের জন্য মনে হয় বইকি; কোনো বড়লোকের বাড়ি, ব্যাঙ্ক বা মাড়োয়ারির টাকার ওপর লোভ জন্মায়; তাদের তো অনেক আছে, অত আতিশয্যের দরকার কী? হৃদয় মনের স্থূলতা ও পাশবিকতায় অর্থ জমিয়ে অর্থ খরচ করেই-বা কী লাভ তাদের? আমাকে কিছু দিক—মানুষের ক্ষমা ও দক্ষিণ্য বিধাতার হৃদয়হীনতাকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখাক—দেশে ফিরে যাই, দুমুঠো খেয়ে বঁচি, কবিতা লিখি, শার্ট তৈরি করি। হাসতে লাগলাম। —কিন্তু এ-ভাবে শিগগিরই কেটে যায় আমার। দারিদ্র্যের সংগ্রামের ভিতর অজস্র নিপীড়িত আত্মা ফুটপথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে দেখি। চেয়ে দেখি কুষ্ঠ রোগী জীৰ্ণশীর্ণ কাঠের ঠেলা গাড়িতে বসে আছে তার। ভিজে ফুটপথের উপর একপাশে কাদাজলের মধ্যে আপাদমস্তক কাপড়ে মুড়ে একটি নারী পড়ে রয়েছে—দেবদারু গাছের ছায়ায় নয়, মেঘের সোনায় নয়, কিন্তু এই পথে-ঘাটে রাস্তায় পৃথিবীর আদি অসীম স্থিররূপ আবিষ্কার করি আমি। নিজের জীবনের বেদনাকে মুকুটের মতো মনে হয়। বাদলের বাতাসে, আবছায়ায়, জনমানব, ট্রাম-বাস, গাছের পাতাপল্লব, পাখপাখালির ৯৮