পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জিতেনের কিছু এসে যেত না । দেড় হাজার-দু হাজার টাকা মাইনে পায় সে, পরামর্শ দিয়ে আরো হাজার-দুই । এ ছাড়া ঘুষ খেয়ে নেয়, এমনিই অন্য নানা রকম উপার্জন আছে তার, ব্যবসা আছে । জিতেনের ক্ষতি হত না, নিজের খুব উপকার হত । এ বিশৃঙ্খলার যুগে পৃথিবীকে উদ্ধার করা দূরের কথা, সমবায়কে ত্রণ করাও খুব শক্ত, অন্ধভাবে চালিত হয়ে সমবায়সুদ্ধ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, কাজেই ব্যক্তির অগত্বাত্রাণের পথ খোলা রাখা দরকার । না-হলে সে যেখানে যে-অবস্থায় আছে একেবারে নিমূল হয়ে যাবে । কিন্তু এত সৰ সফল মীমাংসার পরেও জিতেনের টাকাটা নিতে পারল না নিশীথ । তবুও মনে হল, টাকা না-নিয়ে ভুল করল সে, ও জিনিসটা চুরি মনে করে বার্থ ংস্কারের প্রশ্রয় দিল । সংস্কারগুলো কিছুতেই মরতে চায় না, কিছুতেই আসতে চায় না সত্য উপলব্ধি, যদি অণসেও-বা, কথা ভেবে নিয়ে আলোকিত হয়ে ওঠে মন, তবুও কাজে অগ্রসর হতে গেলে অন্ধকারে অন্ধ সৈনিক আমরা সব যে যাকে মারছি, যে যাকে খাচ্ছি। পথ খুজে পাচ্ছি না কোথাও । সব অণলো নিভে গেছে । জিতেনের ঘর থেকে বেরিয়ে একতলায় না-গিয়ে খাবার ঘরে ঢুকল । ক্ষিদে পেয়েছে, বডড তেষ্টাও পেয়েছে নতুন করে আবার । খাবার ঘরে ঢুকে ডিনগর টেবিলের ওপরেই জিনিস পেল নিশীথ । জিতেনের খাবার ঢাকা আছে, চারটে ডিমসেদ্ধ, অনেকগুলো আলুভাজা । ঠাণ্ডা আলুভাজা খেয়ে যাবে জিতেন । খেতে বসবার সময় ফ্রাইপণনে চড়িয়ে গরম করে দেবে মিসেস দাশগুপ্ত ? এ সব আলু কাল রাতেই ভাজিয়ে রেখেছে তা হলে ; স্বামিনী কি আগে-ভাগে কাজ সেরে রাখতে চায় ? জিতেন কি বাসি আলুভাজা চায় ? কাচ খেকো নাকি জিতেন ? কফি তৈরি কবে রাখে নি অবিশ্যি । টোমটো সস রয়েছে । নিশীথ অণর দেরি না-করে খেতে অপরন্ত করল । চারটে ডিমই খেল সে । জিতেনের ডিশে ডিমের সঙ্গে মাখন রাখা হয় নি বটে । কিন্তু নিশীথ মাখনের টিন পেডে এনে মিলিয়ে নিল, গোটা পাউরুটিটাই শেষ করে ফেলল, শিশিতে মাস্টার্ড ছিল, ঢেলে নিল বেশ ঢালাও হতে, আলুভাজা, ডিম মাস্টার্ড মিশিয়ে ; বেশ ঝাঝাল রাই—ক্ষিদের পেটে সবই ভারী চমৎকার লাগছিল নিশীথের । অণর কী খাবার অগছে ? মাখন আগছে, পাউরুটি আরো আছে , মর্মণলেড আছে, সস আছে, খেল যতটা পারল সব, টিনের মাছ २8