পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চাচ্ছে ; উদেশ্ব, উপহাস—তা হবে না ? সমস্ত বারাকপুর আমরা বরযাত্রী পুরুষের দল মাথায় করে নিয়ে ছিলাম না! মেয়ের সে সবের কী বুঝবে— —“থামুন, থামুন, নেহাত বিয়েটা ঠিক হয়ে গিয়েছিল বলে, নইলে আলিপুরের যে-দল এসেছিল বারাকপুরের বাগানে— এমনি করেই চলছে এদের কথা । দুজনেই উপভোগ করছে প্রচুর । পুরনো কথা মনে পড়ছে সব । দু বছর আগের স্মৃতিগুলো সমস্ত । এত দিন পরে হঠাৎ অণজ সম্মিলিত হতে গিয়ে এদের মনের ভিতর কোথাও কোনো খোচ নেই যেন আণর । কথায় আলাপে পরস্পরকে খোচা দিয়েও যথেষ্ট অণরামই পাওয়া যাচ্ছে যেন, যেন এ উপভোগের থেকে অন্য কোনো অবান্তরের ভিতর সহসা এরা কেউ ডুবে যেতে চায় না, এর রীতিমত পাচ্ছে । প্রমথ অনেক ভেবেচিন্তে, বিয়ে বাড়ির ঢের ফ্যাকরণ ছিঁড়ে, একটা নিরালা ঘর খুঁজে, আজ দুপুরবেলা যে-প্রয়োজনে কল্যাণীকে নিয়ে বসেছিল এসে মাত্ৰ— সেই ব্যাপারটার আগাগোড়াটাকে একটা অনর্থক ঢঙে দাড় করাচ্ছে যেন কে ; কে ? কল্যাণী ? শুভেন্দু ? প্রমথ নিজে ? কিছু বুঝে উঠতে পারা যাচ্ছে না । চুরুটটা ? কিন্তু থাক । কিন্তু কী নিয়ে থাকবে সে ? এদের কথা শুনবে ? কল্যাণীর কথাবার্তা মর্মাহত করছে না প্রমথকে—শুভেন্দুও তাকে পাগল করে তুলছে না, ওদের দু জনের ভিতর আর-যাই থাক, ভালবাসার কোনো অঙ্কুর নেই–কথা, গল্প, দুষ্টুমি ও ধাষ্টোমির বিমুগ্ধতা রয়েছে শুধু, বিমুগ্ধতা রয়েছে। কিন্তু যাই করা হোক না কেন, পরস্পরের সান্নিধ্যে থেকে পরস্পর বিমুগ্ধ হয়ে থাকছে তো এরা । সেও এই বিমুগ্ধতাই চায়, কল্যাণীকে নিয়ে, নিজেকে নিয়ে, বিনা আড়ম্বরে এদের মত বিমুগ্ধ হয়ে পড়বার মত জীবনের সমারোহ আজ আর নেই যেন তার, কল্যাণীর সঙ্গে ভালবাসার কথা বলে জীবনের আড়ম্বর তৈরি করতে চায় সে, মুগ্ধতা পেতে চায়, দুই মুহূর্তের জন্যই, তাও হোক—তাও হোক । তার পর একটা দারুণ দায়িত্বপূর্ণ জীবনের চাপে কিছুরই সময় হবে না আর । 8Ob