পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঠিক ছিপছিপে নয়, একটু মুটিয়েছে । তবু বেশ ছিমছাম, গায়ের রং চীনে বা বার্মিজদের মতন হলদে, হলদেটে নয়, ইংরেজ মেয়েদের মত লাগছে । বা দিশি মেয়েদের মত ফর্শ ঠিক নয়, তবে খুব বেশি ফর্শ দিশি মেয়ের মতই যেন, মাঝে-মাঝে বিলিতি বলে ভুল হয়, শীতের দেশে থাকলে ওদেরই মতন হয়ে যেত, সুযিামামার দেশে থাকতে-থাকতে এ-দেশী গৌরী হয়ে যাবে একদিন । নমিতার বেশ লম্বা চুলগুলো, সোনালি প্রায়। নাক খাড়া, মুখে মঙ্গোল ছশচ নেই বলেই মনে হয়। যেটুকু আছে, তা বিশেষ একটা সৌষ্ঠব দিয়েছে তার মুখশ্ৰীকে ; যেমন চোখ দুটো ঈষৎ বাকাভাবে বসানো নমিতার মুখে—কিন্তু এমনই আর্যভাবে প্রতিষ্ঠিত যে ওর সমস্ত মঙ্গোল ধোয়া কেটে, কেমন একটা কুহকে অথচ পরিচ্ছন্নতায় মর্মস্পর্শী হয়ে আছে সমস্ত মুখের ছশচ—নাক-মুখের প্রতিভা । কাল রণতে ভাল করে তাকিয়ে দেখে নি নমিতার দিকে নিশীথ । আজি গোড়গর থেকেই—ভোরের আলোর রোদে—দেখছিল ; কথা বলছিল কম, দেখে নিচ্ছিল বেশি । দেখা হয়ে গেছে । ব্যবহারের দিক দিয়ে দেখতে গেলে ভাল জিনিসই পেয়েছে জিতেন ; মেয়েটির ভিতরের সার্থকতা কেমন জানা নেই নিশীথের । দু-চারটে কথা বলে এখনো ও কিছু বুঝে উঠতে পারে নি । ‘সেই সানবিমটা নিয়ে বেরিয়ে গেল বুঝি আজ সকালে ? ‘না । অফিসের গাড়িটা কাল রাতে এনে রেখেছিল—খুব সকাল-সকাল অফিসে যেতে হবে বলে । জিতেনের অফিসে যাবার আগে ওরা গাড়ি পাঠিয়ে দেয় । অণমণদের সানবিমটা গ্যারণজে আছে, বেড়াতে যাবেন ?” ‘এখন ?’ ‘এই তো বেড়াবার সময় ।” ‘কোন দিকে ?’ চলুন লেকের ও-দিকটায়। তারপর সেখান থেকে ডায়মণ্ডহারবার।’ ‘ডায়মণ্ডহারবার’—নিশীথ তাকিয়ে বললে, ‘জিতেন ফিরবে কটার সময় ।” ‘অণজ , চারটের আগে না । আমরা দুটো-আড়াইটের মধ্যেই ফিরে অ{সব । এখন সাড়ে অণটটা । সগড়ে দশটা আবিদ এগিয়ে যাব যেখানে গিয়ে পৌছুই—বজবজ—ক্যানিং—’ টিনের থেকে একটা সিগারেট বের করে নিয়ে নমিতা বললে, “যশোর রোডে গিয়েছেন ?—ব্যারাকপুরে ?