পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ৰই, মনীষীদের লেখা ; খুব ভাল জিনিস,—“কিন্তু ভাল জিনিসেরও বেশি খুৱ ভাল নয়, বললে নিশীথ অনেক ক্ষণের নিস্তব্ধতা ভেঙে ! তার মানে ? হাতের বইটা বন্ধ করে সরিয়ে রাখল নমিতা, ধিকি-ধিকি ভস্মস্নিগ্ধ হাসিতে, বই নয়, কী-যেন অন্য কোনো কিছুর সময় অতীত হয়ে যাচ্ছে অনুভব করে উঠে, ফিরে এল নিজের সোফায় নমিতা, হাতের বইটা বন্ধ করে রাখল নিশীথ । কলকাতায় আসবার আগে নিশীথের জলপাইহণটিতে কয়েকটা দিন কী রকমভাবে কেটেছিল ? জলপাইহাট ছেড়ে নিশীথের কলকাতায় রওনা হওয়ার আগে সুমনার শরীরের অবস্থা মোটেই ভাল ছিল না । জলপাইহাটি কলেজের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বনছে না নিশীথের—এখানে থেকে গড়িমসি করে লাভ নেই তার—কলেজের কাজ ছেড়ে দেবে ঠিক করেছিল নিশীথ—না-ছেড়ে দিলেও অবিলম্বে ছুটি তো নেবেই, ছুটি না দিলে কলেজে যাবে না সংকল্প করেছিল সে । এ রকম অবস্থায় দেশে পড়ে থেকে লাভ নেই কিছু—নিশীথের মন কলকাতায়—ঘুরে দেখে আসুক নিশীথ ঃ ভাবছিল সুমনা । নিশীথকে সুমন নিজেই আশা-ভরসার কথা বলে পাঠিয়ে দিতে চাচ্ছিল কলকাতায় । সপরিবারে থাকা কলকাতায় গিয়ে ? কোথায় পরিবার নিশীথের ? কঁাচড়াপাড়ার হাসপাতালে ভানু বঁচিবে না । ভানুর দিদি বেঁচে মরে আছে কোথাও, কোথায় যে বের করতে পারবে না কোনোদিন । কেউ-কেউ বলে পদ্মা-মেঘনার গ্রাম-জঙ্গলে বকের দ্বীপে, চিলের দ্বীপে মেয়েদের কান্নার সুর শোনা যায়—অনেক গভীর রাতে, কেউ-কেউ আরও দূরের খবর দেয়— করাচিতে, শিয়ালকোটে, পেশোয়ারে, লাহোরে, নিজগমের দেশে হায়দ্রাবাদে ? কোথায় নিয়ে গেছে রানুকে—অতদূরে নিশ্চয়ই নয় । কে কারা নিয়ে গেছে— তাও তো বলতে পারা যায় না । জলপাইহাটির কোনো চেনাজান মানুষ সেই সঙ্গে সেই রাত্রে যে সরে পড়েছে তা তো শোনা যায়নি । কলকাতায় তখন দাঙ্গ হচ্ছিল বটে । কিন্তু কলকাতার দাঙ্গণ জলপাইহাটিতে ছিটকে পড়ে নি তো ; কেউ শোনে নি । মনটা ছটফট করছিল সুমনার ; কঁচড়াপাড়ার ভানুর জন্যে ; বঁাচবে না হয় তো ; মরবে না হয় তো ; কিন্তু ভানু এলাকার ভিতর আছে। মরে গেলেও ছাই হাড়, যে-জায়গাটায় দাহ করা হবে, নাগালের ভিতর চিহের দেশে থেকে স্বাবে সৰ । কিন্তু বড়সড় সুন্দর মেয়েটি কেমন সুস্থ ○b