পাতা:জীবনীকোষ-ভারতীয় ঐতিহাসিক-দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্যানিং লর্ড
জীবনী-কোষ
২৭৪
একটা ষড়যন্ত্র চলিতেছে। ইংরেজদের সিপাহী শ্রেণীর মধ্যে অযোধ্যা প্রদেশের উচ্চশ্রেণীর অনেক হিন্দু ছিল। তাহারা অতিশয় রক্ষণশীল ও সংস্কার বিরোধী। তাহারা ইংরেজদের এই সংস্কার মূলক নীতিকে হিন্দুদের জাতিনাশের প্রচেষ্টা বলিয়া মনে করিল। তাঁহাদের মনে মনে এই বিশ্বাসও ছিল যে, তাহাদেরই বাহুবলে অযোধ্যা, পাঞ্জাব প্রভৃতি প্রদেশ বিজিত ও সমগ্র ভারতবর্ষ ইংরেজদের করতলগত হইয়াছে। এই অসন্তোষের বিষয় দেশীয় রাজ্যচ্যুত রাজন্য বর্গ ও তাঁহাদের আত্মীয়েরা জানিতে পারিয়া, এই সুযোগে স্বীয় পূর্ব্বগৌরব লাভে প্রয়াসী হইলেন। এদিকে কোম্পানীর শাসন প্রণালীতেও ত্রুটী ছিল। দেশীয়েরা যত কেন বিদ্বান্, বুদ্ধিমান্ ও চরিত্রবান্ হউন না, তাঁহাদের উচ্চপদ লাভের অধিকার ছিল না। সার জন লরেনস্ (Sir John Lawrence) স্পষ্টই বলিয়া ছিলেন যে, সৈন্যবিভাগে সিপাহীদের শত গুণ থাকিলেও উচ্চপদ লাভের সম্ভাবনা নাই। এই সময়ে আর একটি জনরব প্রচারিত হইল যে, বঙ্গীয় সৈন্যদিগকে যে সমস্ত টোটা ব্যবহার করিবার জন্য দেওয়া হইয়াছে, তাহাতে হিন্দু মুসলমান সকলেরই অস্পৃশ্য গরু ও শূকরের চর্ব্বি মিশ্রিত আছে। কোনও প্রবোধ বাক্যে সিপাহীরা সাস্বনা লাভ করিল
না। ক্রমে তাহারা বিদ্রোহী হইল। বিদ্রোহ প্রথমে বাঙ্গালা দেশের বারাকপুর ছাউনীতেই আরম্ভ হয়। মঙ্গল সিংহ তাহাদের নেতা হইল এবং তাঁহার আদেশে ইংরেজ সেনাপতি নিহত হইলেন। তৎপরে মুরশিদাবাদ ছাউনীর সিপাহীরা বিদ্রোহী হইয়া তাহাদের অধিনায়ককে হত্যা করিল। বিদ্রোহ ক্রমে রাণীগঞ্জ হইতে সুদূর অম্বালা পর্য্যন্ত বিস্তৃত হইল। ১৮৫৭ খ্রীঃ ১৬ই মে মিরাটের সিপাহীরা বিদ্রোহী হইয়া তথাকার বহু শ্বেতাঙ্গ কর্ম্মচারীকে হত্য করিয়া বারুদখানায় আগুন ধরাইয়া দিল। তৎপরে দিল্লী অভিমুখে গমন করিয়া দিল্লীর পদচ্যুত শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহকে হিন্দুস্থানের সম্রাট বলিয়া ঘোষণা করিল। ১৮৫৬ সালের জুন ও জুলাই মাসে কাণপুরে সিপাহীরা বিদ্রোহী হইল। এই স্থানে পেশোয়া বংশের শেষ নরপতি বাজীরাওয়ের পোষ্য পুত্র ধুন্ধু পন্থ নানাসাহেব অবস্থান করিতেছিলেন। তিনি বিদ্রোহীদিগকে হস্তগত করিয়া হিন্দুস্থানে পুন হিন্দু সাম্রাজ্য স্থাপনে প্রয়াসী হইলেন। বিদ্রোহী সিপাহীগণ ইতিপুব্বেই অনেক সাহেবকে হত্যা করিয়া ছিল। অবশিষ্ট সাহেবের তিন সপ্তাহ পর্য্যন্ত আত্মরক্ষা করিয়া পরে নানাসাহেবের শরণাপন্ন হইলেন। নানাসাহেব তাঁহাদের ৪৫০ জনকে