পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ডুব দিইয়ে নিয়ে আসা হত তাঁদের। এ-বাড়ি থেকে গগন দাদাদের বাড়িতে কখন যেতে হলেও পাল্কী চড়ে যেতেন। সেই সব প্রাচীন সংস্কার ভঙ্গ করে যখন তাঁরা মেজমামার ইচ্ছানুযায়ী পথানুবর্তিনী হলেন, কর্তাদাদামশায় কোন বাধা দেননি তখন—আমার বেলায় কেন দেবেন? তবুও তাঁকে বলতে হবে, আশীর্বাদ নিতে হবে। তিনি আমার যাবার ইচ্ছা শুনে কোন আপত্তি প্রকাশ করলেন না। শুধু বড়মাসিমাকে ডেকে বললেন—“সরলা যদি অঙ্গীকার করে জীবনে কখনো বিয়ে করবে না, তাহলে আমি তার তলোয়ারের সঙ্গে বিয়ে দিই যাবার আগে।”

 এই রোমাণ্টিক প্রস্তাবে আমি নিজের ভিতর ডুবে ভেবে দেখলুম—কখনোই যে বিয়ে করব না, এ রকম প্রতিজ্ঞা নিতে কি প্রস্তুত আমি? আমাদের বাড়িতে থিয়সফির প্রভাবের দিনে কাশী থেকে একজন মাতাজীর প্রাদুর্ভাব হয়েছিল। মা বলতেন—“সরলার বিয়ে দেব না, ঐ মাতাজীর মত দেশের কাজে উৎসর্গিত থাকবে।” ছেলেবেলায় মা-বাপ স্রোতের যে মুখে ভাসান, তৃণটি সেই মুখেই চলতে থাকে। আমার মনোবৃত্তিও অ-বিবাহের মুখে চলে চলে তারই তটে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। পরে মায়ের নিজের মত বদলে গিয়েছিল, খুব চাইতেন আমার বিয়ে দিতে, আমি কিন্তু আর ধরাছোঁয়া দিইনে—যাদের নাম করতেন, তাদেরই না-পছন্দ করতুম। কিন্তু কর্তা দাদামশায় যখন প্রতিজ্ঞা করতে বললেন যে, এ জীবনে কখনো বিয়ে করব না, আমার মনে বিদ্রোহ এল। নিজকে যাচিয়ে দেখলুম এরকম প্রতিজ্ঞা নিয়ে ‘চিরকুমারীত্ব’ স্বীকার করতে প্রস্তুত নই। কোন মেয়েই সেইটে তার অন্তিম লক্ষ্য করতে পারে না। যতদিন স্বচ্ছন্দে-বিহার চলে চলুক, কিন্তু একদিন যে পরচ্ছন্দে নিজেকে চালানর ইচ্ছে হতে পারে, সে ইচ্ছে পূরণের পথে আপনার হাতেই চিরকালের মত বেড়া তুলে দিতে মন মানলে না।

 বাবামশায় যে সম্মতি দিয়েছিলেন তার ভিতর একটি গুপ্ত আশা তাঁর নিহিত ছিল—যাব কোথায়? উপযুক্ত চাকরি কোথায় আমার জন্যে বসে আছে? তা কিন্তু ছিল। সরলা রায়দের সঙ্গে আমি যখন মহীশূর ভ্রমণে গিয়েছিলুম, তখন মহারাজার সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়নি—তিনি গিয়েছিলেন উটকামণ্ডে। কিন্তু সেখানকার দেওয়ান-প্রমুখ সকল বড় কর্মচারীরা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের দৌহিত্রী বলে আমায় অত্যন্ত উচ্চ নজরে দেখেছিলেন। আমি ডাক্তার রামস্বামীর মাতুল, মহারাজের প্রিয়পাত্র, রাজ্যে অতি প্রভাবশালী, মহারাণী গার্লস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও

১০৭