পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সংস্কারগত আঘাত লাগলেও শ্রতিগত ব্যথা পেলেন না। শুক্ল না যজুর্বেদীয় মন্ত্র বল্লুম—সেই সম্বন্ধে আমার সঙ্গে সংস্কৃতে খানিকক্ষণ আলোচনা করলেন। আমি ব্যাকরণ বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে যতটা পারি উত্তর দিলুম। নরসিংহ আয়েঙ্গার মহা খুশী হয়ে আমায় তারপর নিয়ে গেলেন সাংখ্যের ক্লাসে। সাংখ্যের পণ্ডিত আমায় অপ্রতিভ করার জন্যে আমন্ত্রণ করলেন শিষ্যদের কোন প্রশ্ন করতে। আমি তাতে প্রথমে অগ্রসর হলুম, কারণ আমার সংস্কৃতে কথোপকথন চালানর শক্তির উপর বেশী জোরজুলুম করতে ভীত হচ্ছিলুম। কিন্তু অবশেষে নরসিং আয়েঙ্গারের পীড়াপীড়িতে বাধ্য হয়ে সাংখ্যকারিকা থেকে একটি প্রশ্ন করলুম। অধ্যাপক বলে উঠলেন—‘সাধু! সাধু!” কিন্তু শিষ্যেরা তাঁর উত্তর দিতে একটু থতমত খেয়ে গেল। নরসিং আয়েঙ্গার গর্বে ফুলে উঠলেন, সেদিনকার মত আমার পর্যটন শেষ হল।

 মহীশূরে গিয়ে ঠেকে অনুভব করেছিলুম বাঙলার স্কুল কলেজে বাঙালী ছাত্র-ছাত্রীদের যে সংস্কৃতে কথাবার্তা কওয়ানর অভ্যেসটা একেবারে বাদ দেওয়া হয় সেটা একটা মস্ত ত্রুটি। বিদ্যাসাগর মশায়ের উপক্রমণিকা থেকে সেকালে সংস্কৃতের শিক্ষারম্ভ হত আমাদের। তাতে ফলং ফলে ফলানি, জলং জলে জলানি—এইসব আওড়িয়ে আওড়িয়ে মুখস্থ করাই ছিল কাজ। বিশেষ্য বিশেষণ ও ক্রিয়াপদ জুড়ে এক একটা সেণ্টেন্স রচনা করার পন্থাই ছিল না তাতে। মহীশূর স্কুলে মহারাষ্ট্রীয় স্কলার ভাণ্ডারকারের যে বই সংস্কৃতের প্রথম পাঠ্য তাতে দেখলুম আরম্ভ থেকেই ছাত্র-ছাত্রীরা সংস্কৃতে অল্প অল্প কথোপকথনে অভ্যস্ত হয়। ঠিক য়ুরোপের অলেনার্ফের বইয়ের মত এটি। সে বইখানি য়ুরোপের সর্বভাষায়—ফ্রেঞ্চ জার্মান ইতালীয়ান প্রভৃতিতে ইংরেজদের কথোপকথন চালাতে শেখানর জন্যে প্রসিদ্ধ। প্রথমেই কানে শোনার মত ‘direct method’এ কতকগুলি সেণ্টেন্সের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়—তারপরে ব্যাকরণের জটিলতায় প্রবেশ করান হয়। বাঙলা স্কুলকলেজেও এই দরকার।

 দ্বিতীয় ত্রুটি-কলকাতা যুনিভার্সিটির অধীনে সংস্কৃত প্রথম পাঠ্য পুস্তক থেকে আরম্ভ করে শেষ পাঠ্য পুস্তক পর্যন্ত সবই দেবনাগরী লিপিতে নয়—বাঙলা লিপিতেই লিপিবদ্ধ। ছাত্র-ছাত্রীরা এমন কি টোলের পণ্ডিতেরাও দেবনাগরী অক্ষরের সঙ্গে পরিচিত নন। য়ুনিভার্সিটির পরীক্ষায় বাঙলা অক্ষরে লিপিবদ্ধ প্রশ্নের উত্তরও তাতেই

১১১