পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সাম্বৎসরিক না করে সেদিন তোমাদের সভা থেকে ‘প্রতাপাদিত্য উৎসব’ কর, আর দিনটা আরও পিছিয়ে ১লা বৈশাখে ফেল, যেদিন প্রতাপাদিত্যের রাজ্যাভিষেক হয়েছিল। সভায় কোন বক্তৃতাদি রেখ না। সমস্ত কলকাতা ঘরে খুঁজে বের কর কোথায় কোন্‌ বাঙালী ছেলে কুস্তি জানে, তলোয়ার খেলতে পারে, বক্সিং করে, লাঠি চালায়। তাদের খেলার প্রদর্শনী কর—আর আমি তাদের এক-একটি বিষয়ে এক-একটি মেডেল দেব। একটিমাত্র প্রবন্ধ পাঠ হবে—সে তোমাদের সাহিত্য-সভার সাম্বৎসরিক রিপোর্ট নয়—প্রতাপাদিত্যের জীবনী। বই আনাও—পড় তাঁর জীবনী, তার সার শোনাও সভায়?”

 মণিলাল রাজি হল। তলোয়ার খেলা দেখানর জন্যে তাদের পাড়ার বাঙালী-হয়ে-যাওয়া রাজপুত ছেলে হরদয়ালকে যোগাড় করলে, কুস্তির জন্যে মসজিদবাড়ির গুহদের ছেলেরা এল, বক্সিংয়ের জন্যে ভূপেন বসুর ভাইপো শৈলেন বসুর দলবল এবং লাঠির জন্যে দু-চারজন লোক কোথা হতে সংগ্রহ হল। আমি যেভাবে বলেছিলুম, সেইভাবে সভার কার্যক্রম পরিচালিত হল। কেবল আরম্ভে মণিলালের অনুরোধে আমাকে দিয়ে প্রতাপাদিত্যের একটি উদ্বোধনের দ্বারা সভার ‘atmosphere’ তৈরি করে দেওয়া হল। তারপরে মণিলাল-লিখিত তাঁর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠের পরই নানা রকম খেলাধূলা চলল ও শেষে আমার হাতে মেডেল বিতরণ। সেই মেডেলের একদিকে খোদা ছিল—“দেবাঃ দুর্বলঘাতকাঃ”।

 সভায় কলকাতার সংবাদপত্রের প্রতিনিধিরা প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন। ‘সঞ্জীবনী’ লিখলেন—‘‘কলিকাতার বুকের উপর যুবক-সভায় একটি মহিলা সভানেত্রীত্ব করিতেছেন দেখিয়া ধন্য হইলাম।” ‘বঙ্গবাসী’র লেখার সার,—“মরি মরি কি দেখিলাম! এ কি সভা! বক্তিমে নয়, টেবিল চাপড়-চাপড়ি নয়-শুধু বঙ্গবীরের স্মৃতি আবাহন, বঙ্গ-যুবকদের কঠিন হস্তে অস্ত্রধারণ ও তাদের নেত্রী এক বঙ্গললনা—ব্রাহ্মণ কুমারীর সুকোমল হস্তে পুরস্কার বিতরণ। দেবী দশভুজা কি আজ সশরীরে অবতীর্ণা হইলেন? ব্রাহ্মণের ঘরে কন্যা জাগিয়াছে, বঙ্গের গৌরবের দিন ফিরিয়াছে।’’

 বিপিন পাল তাঁর Young India-তে টিপ্পনী করলেন—

 ‘‘As necessity is the mother of invention, Sarala Devi is the mother of Pratapaditya to meet the necessity of a hero for Bengal!”

১২৮