পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 দেশের লোকে এ টিপ্পনীতে ভড়কালে না। বাঙালীর নিবিড়তম মর্মদেশে প্রতাপাদিত্যের প্রবেশ হল। তার প্রথম বহির্বিকাশ দেখা দিলে প্রোফেসর ক্ষীরোদ বিদ্যাবিনোদের প্রতাপাদিত্য নাটক রচনায় ও স্টার থিয়েটারে রাতের পর রাত তার অভিনয় পরিচালনায়। দেখাদেখি রেষারেষি মিনার্ভায় অমর দত্তের ‘প্রতাপাদিত্য’রও আবির্ভাব হল।

 তীর এসে বিঁধল আমার বুকে রবীন্দ্রনাথের হাত থেকে—সাক্ষাতে নয়, দীনেশ সেনের মারফতে। দীনেশ সেন একদিন তাঁর দূত হয়ে এসে আমায় বললেন-“আপনার মামা ভীষণ চটে গেছেন আপনার উপর।”

 “কেন?”

 ‘‘আপনি তাঁর ‘বৌঠাকুরাণীর হাটে’ চিত্রিত প্রতাপাদিত্যের ঘৃণ্যতা অপলাপ করে আর এক প্রতাপাদিত্যকে দেশের মনে আধিপত্য করাচ্ছেন। তাঁর মতে, প্রতাপাদিত্য কখনো কোন জাতির hero-worship-এর যোগ্য হতে পারে না।”

 আমি দীনেশবাবুকে বললুম—“আপনি তাঁকে বলবেন, আমি ত প্রতাপাদিতাকে moral মানুষের আদর্শ বলে খাড়া করতে যাইনি—তাঁর পিতৃব্য-হনন প্রভৃতির সমর্থন করিনি। তিনি যে politically great ছিলেন, বাঙলার শিবাজী ছিলেন, মোগল-বাদশার বিরুদ্ধে একলা এক হিন্দু জমিদার খাড়া হয়ে বাঙলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, নিজের নামের সিক্কা চালিয়েছিলেন—সেই পৌরুষ, সেই সাহসিকতার হিসেবে তিনি যে গৌরবার্হ, তাই প্রতিষ্ঠা করেছি। এতে যদি ইতিহাসগত কোন ভুল থাকে তিনি সংশোধন করে দিন, আমি মাথা পেতে স্বীকার করে নেব।’’ এর উত্তর নিয়ে দীনেশ সেন আর পুনরাগমন করেননি। বাঙালীর বীরপূজা চলতে থাকল। অতঃপর আমি ‘বঙ্গের বীর’ সিরিজের ছোট ছোট পুস্তকাবলী বের করতে আরম্ভ করলুম। এবার প্রতাপাদিত্যের পুত্র উদয়াদিত্যের উৎসবের আয়োজন করলুম। সেকালে সুরেন বাঁড়ুয্যের ‘Bengalee’ বাঙালী পরিচালিত মুখ্য ইংরেজি পত্র। ‘Bengalee’তে খুব উৎসাহের সঙ্গে আমার আয়োজিত সব অনুষ্ঠানের রিপোর্ট বেরতে লাগল। উদয়াদিতা-উৎসবের ঘোষণায় বেঙ্গলি এইভাবে লিখলেন—“সরলা দেবী দেশের উপর নতুন নতুন ‘surprise spring’ করছেন—আমরা তাঁর সঙ্গে দৌড়ে দৌড়ে হাঁফিয়ে পড়ছি। রোজ ভোরে উঠে মনে হয়—অতঃ কিম্‌?”

১২৯