পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/১৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জন্যে কেন প্রয়াসী হয়েছি? লর্ড কার্জনের প্রচেষ্টায় ইণ্ডিয়া গবর্নমেণ্ট থেকে যে Corps পাঠান হবে তার সঙ্গে এইটে মিলিত কেন না করি? তাছাড়া আমার Corps কি St. John Ambulance Association-এর ট্রেনিং প্রাপ্ত? তা না হলে যাওয়া নিষ্ফল—তিনি আমায় সতর্ক করে দিলেন। হয়ত এ বিষয়ে বাঙালীদের কোন স্বাধীন প্রচেষ্টা ইংরেজদের মনঃপুত ছিল না, হয়ত ইণ্ডিয়া গবর্নমেণ্ট থেকেই এ চিঠির ইঙ্গিত গিয়েছিল,—যাই হোক এর থেকে আমি একটা মস্ত শিক্ষা পেলুম। ব্যাপারটার গুরুত্ব সম্বন্ধে একটা ধারণা এল। আমার ‘বেঙ্গলী রেডক্রস’ সংগঠন ও যুদ্ধক্ষেত্রে প্রেরণের পরিকল্পনাটি শুধু ভাবের তোড়ে নির্গত একটি বস্তু। এর জন্যে নিজেদের তৈরি হওয়ার প্রধান উপকরণ কি কি তা ভাবিনি। দেশের লোকেরাও কেউ এদিকে মাথা ঘামাননি, আমায় সে সম্বন্ধে কেউ সচেতনও করেননি—একের উৎসাহেই খালি সকলের উৎসাহ প্রদীপ্ত হয়ে উঠেছে। শুধু শতাব্দীগত ভীরুতার শিক্ষাকে দলিত করে—‘শতহস্তেন বাজিনঃ’ প্রভৃতি বুলি প্রত্যাখ্যান করে ভয়াবহ যুদ্ধস্থলে গোলাবন্দুকের সন্নিকটে উপস্থিত হওয়ার সাহস অবলম্বনই যে যথেষ্ট নয়, যে উদ্দেশ্যে যাওয়া সে উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্যে—আহত মুমূর্ষুদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও সেবার জনো যারা ডাক্তার নয় তাদের সে বিষয়ে অধীতবিদ্য হয়ে যাওয়া যে কতদূর প্রয়োজন তা ভাবিনি। কর্নেল ইয়েট্‌সের চিঠি পেয়ে এ সম্বন্ধে জাগরণ এল। কিন্তু St. John Ambulance Association কি বাঙালীদের শেখাবে? সেটা British Red Cross-এর অঙ্গীভূত—তাতে ইংরেজ ও ফিরিঙ্গি ছাড়া আর কেউ শিক্ষা পায় বলে ত জানিনে। আমি তার বড়কর্তাকে একখানি চিঠি লিখে অনুরোধ করলুম আমার সঙ্গে এসে দেখা করতে, তিনি সৌজন্য করে এলেন। আমি তাঁকে সব অবস্থাটা খুলে বললুম। তিনি শুনে বললেন—“এ পর্যন্ত একটি বাঙালীও তাঁদের কাছে ট্রেনিংপ্রার্থী হয়ে কখন আসেনি। তাঁদের ক্লাস শুধু ইংরেজ ও ফিরিঙ্গিতেই ভরা। বাঙালীদের শেখান হবে কিনা এ বিষয়ে কোন দিন কোন প্রশ্ন উঠবার অবসরই হয়নি। আমার অনুরোধ তিনি নিশ্চয়ই রক্ষা করবেন—বেঙ্গলী Ambulance Corpsকে উপযুক্তভাবে শিক্ষিত করে দেবেন। সেজন্যে তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে যাবার পূর্বে অন্তত তিন মাস কলকাতায় অবস্থান করে শিক্ষা নেওয়ার দরকার।”

 এই সকল পর্যালোচনা চলছে—ইতিমধ্যেই খবরের কাগজে হঠাৎ

১৪৭