পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 কুমুদিনী খাস্তগিরি (১৮৬৫-?): ডাঃ অন্নদাচরণ খাস্তগীরির কন্যা। বেথুন কলেজের কৃতী ছাত্রী, বি-এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। ১৮৯১-৯৩ সনে বেথুন স্কুলের দ্বিতীয় শিক্ষয়িত্রী, ১৮৯৪ সনে প্রথম শিক্ষয়িত্রী এবং ১৮৯৫-৯৭ সনে বেথুন কলেজের তৃতীয় অধ্যাপকের কার্য করেন। ১৮৯৪ সনে কিছুকাল মহিশূরে মহারাণী গার্লস স্কুলে কর্মে লিপ্ত ছিলেন বলিয়া সরলা দেবী উল্লেখ করিয়াছেন। তাঁহার স্থলে তিনি সেখানে নিযুক্ত হইয়া যান। ১৮৯৭ সনে বিবাহের পর তিনি কুমদিনী দাস নামে পরিচিত হন। ক্রমে পদোন্নতি হইয়া ১৯০২ সনে তিনি বেথুন কলেজের অধ্যক্ষ হন। এই পদে তিনি ১৯১২ সনের মার্চ পর্যন্ত অধিষ্ঠিত ছিলেন। ইহার পর তিনি ঢাকা বিভাগের সহকারী ইন্সপেক্‌ট্রেস্ অব স্কুল্‌স্ হইয়া যান। এখান হইতে ১৯১৮ সনের এপ্রিল মাসে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।


 নতুন মামা: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪৯-১৯২৫) মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের পঞ্চম পুত্র। দেবেন্দ্রনাথ-কেশবচন্দ্র প্রতিষ্ঠিত কলিকাতা কলেজ হইতে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ১৮৬৪ সনে এণ্ট্রান্স পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন। বিখ্যাত রমেশচন্দ্র দত্ত এই বৎসর প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়াছিলেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ খুল্লতাত পত্র গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে কিছুকাল কলিকাতা গবনমেণ্ট আর্ট স্কুলে শিল্পবিদ্যা শিক্ষা করেন। ১৮৬৮ সনে কাদম্বরী দেবীর সঙ্গে তিনি পরিণয়-সূত্রে আবদ্ধ হন। কাদম্বরী দেবী এই পুস্তকে ‘নূতন মামী' বলিয়া উল্লিখিত হইয়াছেন।

 জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বহুমুখী প্রতিভা বিভিন্ন কর্মপ্রচেষ্টার মধ্যে আত্মপ্রকাশ করে। আদি ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদক রূপে (১৮৬৯-১৮৮৪} তিনি ইহার পরিচালন ও প্রচারে মন দেন। তিনি সঙ্গীতবিদ্যা-চর্চার বিশেষ আয়োজন করেন। প্রথমে কেশবচন্দ্রের স্ত্রী-স্বাধীনতার বিপক্ষ হইলেও তিনি পরে ইহার একান্ত সমর্থক হইয়া উঠেন, এবং নিজের পত্নীকে লইয়া প্রকাশ্য রাজবর্ত্মে স্বামি-স্ত্রী পাশাপাশি দুইটি ঘোড়ায় বসিয়া ছুটাইয়া চলিতেও দ্বিধা বোধ করেন নাই। এই স্বাধীনার মনোবৃত্তি তিনি রাজনীতি ও শিল্পোন্নতির মধ্যেও অনুপ্রবিষ্ট করান। তৎপ্রতিঠিত সঞ্জীবনী-সভা বাঙ্গালী যুবকদের মধ্যে বৈপ্লবিক মনোভাবের একটি প্রকৃষ্ট নিদর্শন। শিল্পোন্নয়ন প্রয়াসে তিনি নিজের বিস্তর ক্ষতি স্বীকার করিয়াও শিল্প-বাণিজ্য পরিচালনে অগ্রসর হইয়াছিলেন। 'বরিশাল স্টীমার কোম্পানী' জ্যোতিরিন্দ্রনাথের এক অপূর্ব কীর্তি।

 বাংলা সাহিত্যের অনলস সাধনা, নাটক-অভিনয়ে উদ্যোগ আয়োজন, 'ভারতী' পরিচালনে ঐকান্তিকতা, মরাঠী ও ফরাসী গ্রন্থসহমূহ অনুবাদ দ্বারা বাংলা সাহিত্যের পুষ্টিসাধন, ভারত-সঙ্গীত-সমাজ প্রতিষ্ঠা (১৮৯৭) এবং সঙ্গীত-বিষয়ক 'বীণাবাদিনী’ ও 'সঙ্গীত-প্রকাশিকা' সম্পাদন প্রভৃতি তাঁহাকে অমর করিয়া রাখিয়াছে।

॥ নয়॥

 মাদাম ব্লাভাট্‌স্কি (১৮৩১-৯১)। বিখ্যাত থিয়সফিস্ট্ এবং থিরসফিক্যাল সোসাইটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ব্লাভাট্‌স্কির পুরা নাম-হেলেনা পেট্রোভ্‌না ব্লাভাট্‌স্কি। ব্লাভাট্‌স্কি জাতিতে জার্মান; কিন্তু তাঁহার পূর্বপুরুষেরা রাশিয়ায় বসতি স্থাপন করিয়াছিলেন। ষাট বৎসরের এক বৃদ্ধের সঙ্গে সত্তর বৎসর বয়সে তাঁহার বিবাহ হয়। অল্পদিন পরে উভয়ের মধ্যে বিবাহবিচেছদ ঘটে। ব্লাভাট্‌স্কি সাহসী ও তেজস্বিনী মহিলা। ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বহু বৎসর পরিভ্রমণ করেন এবং নানা বিপদ-আপদের সম্মুখীন হন। তিনি বহু কষ্টে কাশ্মীরের পথে তিব্বত যান। কথিত আছে, তিনি এক তিব্বতী সাধুর নিকট দীক্ষা

২১৯